Srilanka: দেশজুড়ে জ্বালানি সংকট, শ্রীলংকায় সরকারি অফিস-স্কুল বন্ধ ঘোষণা

নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে শ্রীলংকা। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে দেশটির রাজনীতি থেকে শুরু করে মানুষের দৈনন্দিন জীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত। এরইমধ্যে জ্বালানি সংকটে দেশের সকল স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে শ্রীলংকান কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (২০ মে) দেশটির জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, সারা দেশে ‘বর্তমান জ্বালানী ঘাটতি এবং পরিবহন সুবিধার সমস্যাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে’ অপরিহার্য পরিষেবাগুলো বাদে অন্যান্য সরকারি অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

শ্রীলংকা এখন প্রায় পেট্রলবিহীন এবং অন্যান্য জ্বালানিরও তীব্র ঘাটতির সম্মুখীন। শুক্রবার হাজার হাজার মানুষকে জ্বালানী স্টেশনগুলোতে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

এর আগে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ করতে না পারায়, দিনে চার ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। শুধু ক্রমবর্ধমান জ্বালানী ঘাটতিই নয় অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আমদানির জন্য অর্থ খুঁজে পেতে সংগ্রাম করছে দেশটির সরকার।

বর্তমানে শ্রীলংকা সরকারের তহবিলে রয়েছে দুই দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্ববাজার থেকে নেয়া ঋণের তুলনায় অতি নগণ্য। দেশটির ঋণের মধ্যে আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ডে রয়েছে ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ, এরপরই জাপান- শ্রীলংকাকে দেওয়া তাদের ঋণের পরিমাণ ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। আর চীন সরকার দিয়েছে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। আমদানির জন্য বিপুল এই রিজার্ভ ঘাটতি দেশটিতে জ্বালানি, শক্তি, খাদ্য এবং ওষুধের সংকটের জন্ম দিয়েছে।

এদিকে নানাবিধ সংকটের মধ্যেই দেশজুড়ে বিরোধীদের প্রতিবাদ ও অস্থিরতা চলছে। বিক্ষোভকারীরা গ্যাস ও জ্বালানির দাবিতে প্রধান সড়ক অবরোধ করেছে।

অন্যদিকে শ্রীলংকায় আরো ৯ জন নতুন মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। নতুন নিয়োগ পাওয়া নয় জন মন্ত্রীই শুক্রবার শপথ নিয়েছেন। এতে করে আগের মন্ত্রিসভার পদত্যাগের পর সরকারকে স্থিতিশীল করার চেষ্টার অংশ হিসেবে নিয়োগ করা নতুন মন্ত্রীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে।

নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে চারজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য, তিনজন ক্ষমতাসীন দলের এবং বাকি দুইজন প্রধান বিরোধী দলের সদস্য। এর আগে গত সপ্তাহে ক্ষমতাসীন দলের চারজন সংসদ সদস্যকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে শ্রীলংকা। এরপর থেকে তামিল সংকটসহ বহু সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রটিকে। বর্তমানে আর্থিক সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে দেশটিতে। এই সংকট থেকে আদৌ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।

এই পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে-সহ গোটা রাজাপাকসে পরিবারকে দায়ী করছে লংকানরা। দীর্ঘদিন ধরেই প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে। দল, মত, সম্প্রদায় নির্বিশেষে শ্রীলংকার নাগরিকরা একজোট হয়ে রাস্তায় নেমেছেন। চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ।

অন্যদিকে, বৈদেশিক মুদ্রার অভাবের কারণে শ্রীলংকায় এই সংকট দেখা দিয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। কারণ নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা কম হওয়ায় এই দ্বীপরাষ্ট্রকে অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

এজন্য প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন। অথচ রাজকোষ ফাঁকা! ফলে পণ্যের সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমেছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। সঙ্গে যোগ হয়েছে তীব্র জ্বালানি সংকটও। আর তাই চলমান এই সংকটে খুব একটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরাও।

সূত্র: এবিসি নিউজ

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy