
লর্ডসের ঐতিহাসিক মাঠে গতকাল (শনিবার) পর্দা নামলো বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩-২৫ চক্রের। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আইসিসির তিন ফরম্যাটের কোনো বৈশ্বিক আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগে ১৯৯৮ সালে তারা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতলেও, নির্দিষ্ট ফরম্যাটে এটিই তাদের প্রথম বৈশ্বিক শিরোপা। টেম্বা বাভুমার নেতৃত্বাধীন প্রোটিয়া দল শুধু শিরোপাই নয়, পকেটস্থ করেছে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পুরস্কারও।
‘চোকার্স’ তকমা ঘুচিয়ে ঐতিহাসিক জয়:
অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ২৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা তৃতীয় দিন শেষে ২ উইকেটে ২১৩ রান তুলে নিয়েছিল। চতুর্থ দিনে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৬৯ রান, হাতে ছিল ৮ উইকেট এবং পুরো দুই দিন সময়। এমন সহজ সমীকরণেও অনেকে প্রোটিয়াদের পক্ষে বাজি ধরতে ভয় পাচ্ছিলেন, কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা ছিল ভিন্ন। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে শেষ ২৪ বলে ২৬ রানের সহজ সমীকরণও মেলাতে না পেরে শিরোপা হাতছাড়া করেছিল তারা, যার ফলে ‘চোকার্স’ তকমা আরও জোরালো হয়েছিল।
তবে এবার আর সেই হতাশার গল্প নয়! ২৭ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে আরেকটি আইসিসি ট্রফি উঠল দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই ঐতিহাসিক জয়ে প্রোটিয়ারা অর্থ পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে ৩.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৩ কোটি ৬৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকার সমান।
আইসিসির রেকর্ড প্রাইজমানি:
আইসিসি এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রের জন্য মে মাসেই বড় অঙ্কের প্রাইজমানি ঘোষণা করেছিল। মোট অর্থ পুরস্কার ধরা হয় ৫.৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের দুই আসরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স-আপ সহ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৯টি দলের জন্যই প্রাইজমানি বরাদ্দ রাখা হয়। গত দুই আসরের বিজয়ী দল (নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া) ট্রফির পাশাপাশি পেয়েছিল ১.৬ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এবারের চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা তার প্রায় দ্বিগুণ বেশি অর্থ লাভ করলো।
অন্যান্য দলের প্রাপ্তি:
টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে ওঠা গতবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া এবার রানার্সআপ হয়ে পেয়েছে ২.১৬ মিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ২৬ কোটি ২৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার বেশি। এই অঙ্কও আগের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি।
এই আসরে তৃতীয় স্থানে শেষ করা ভারত পাচ্ছে ১৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার বা ১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার বেশি।
চতুর্থ হওয়া নিউজিল্যান্ডের জন্য থাকছে ১২ লাখ ডলার।
পঞ্চম স্থানে থাকা ইংল্যান্ড পাবে ৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
ষষ্ঠ স্থানে থেকে শেষ করা শ্রীলঙ্কা পাচ্ছে ৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার।
সপ্তম স্থানে থেকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের চক্র শেষ করা বাংলাদেশ পাচ্ছে ৭ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার তথা ৮ কোটি ৭৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
এছাড়া অষ্টম ও নবম স্থানে থেকে আসর শেষ করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান পাবে যথাক্রমে ৬ লাখ এবং ৪ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার।
এই শিরোপা জয় শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে নয়, তাদের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনেও দীর্ঘদিনের আক্ষেপের অবসান ঘটিয়ে এক নতুন উল্লাসের সূচনা করলো।