
ইডেন গার্ডেন্সে কলকাতা ক্রিকেট লিগের ইস্টবেঙ্গল বনাম ভবানীপুর ক্লাবের ম্যাচ যে এমন চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার জন্ম দেবে, তা বোধহয় কেউই ভাবতে পারেননি। বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হওয়ার পর দুই ক্লাবের ক্রিকেটার ও কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র বচসা শুরু হয়, যা দ্রুত হাতাহাতি ও ভাঙচুরের পর্যায়ে চলে যায়। পরিস্থিতি এতটাই বেসামাল হয়ে পড়েছিল যে, সিএবি (CAB) কর্তাদের রীতিমতো পুলিশ ডাকতে হয়। এই ঘটনা কলকাতা ময়দানী ক্রিকেটে সাম্প্রতিক অতীতে এক নজিরবিহীন লজ্জাজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।
ভবানীপুর শিবিরের দাবি, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হতেই ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাদের অভিযোগ, তখনো খানিকক্ষণ ম্যাচ খেলানো সম্ভব ছিল এবং আর মাত্র দুটি উইকেট তুলে নিতে পারলেই তারা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত। ফলে, জয়ের দোরগোড়া থেকে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভবানীপুর শিবিরে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ উঠেছে, ম্যাচ বন্ধ হওয়ার পর ইস্টবেঙ্গলের দুই অপরাজিত ব্যাটার ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় ও কণিষ্ক শেঠ মাঠ ছেড়ে বেরনোর সময় ভবানীপুরের শাকিরের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। এই বচসা দ্রুত দুই দলের কর্মকর্তাদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে এবং ড্রেসিংরুমের বাইরে দুই শিবিরের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ধাক্কাধাক্কিতে দরজার কবজাও খুলে যায়।
এই ম্যাচটি প্রথম দিন থেকেই ঘটনাবহুল ছিল। দ্বিতীয় দিনে শাকিব হাবিব গান্ধীর বিতর্কিত আউট ঘিরে সমস্যা শুরু হয়। আম্পায়ার কৃষ্ণেন্দু পাল শাকিবকে আউট ঘোষণা করলে তিনি মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু পরে স্কোয়্যার লেগ আম্পায়ার অভিজিৎ ভট্টাচার্যর সঙ্গে আলোচনা করে আম্পায়ার শাকিবকে নট আউট ঘোষণা করে আবার ডেকে নেন। এই সিদ্ধান্তে ইস্টবেঙ্গল ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং প্রায় পাঁচ ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। পরিস্থিতি সামলাতে আসরে নামতে হয় সিএবি সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তাঁর মধ্যস্থতায় শেষ পর্যন্ত খেলা শুরু হয়।
এর আগে, ভবানীপুর ক্লাব শাকিব হাবিব গান্ধীর দ্বিশতরানের ওপর ভর করে ৬৪৩ রানের বিশাল স্কোর তোলে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ইস্টবেঙ্গল সময় নষ্টের কৌশল নেয় বলে অভিযোগ ওঠে। প্রচণ্ড গরমের অজুহাতে ক্রিকেটাররা বারবার অসুস্থ হওয়ার ভান করতে থাকেন, যার ফলে ডাক্তারকে একাধিকবার মাঠে প্রবেশ করতে হয়। এর ফলস্বরূপ, এক ঘণ্টায় মাত্র চার ওভার বোলিংও সম্পূর্ণ করা যায়নি। ৬০০-র বেশি রানের চাপ মাথায় নিয়ে শেষ দিনে ১৪৭ রানে চার উইকেট হাতে নিয়ে ইস্টবেঙ্গল ব্যাট করতে নামে।
বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল আট উইকেটের বিনিময়ে ২৪৩ রান তোলে। তবে শেষ দিনের আলোচনার কেন্দ্রে ছিল ক্রিকেটার ও কর্তাদের মধ্যে হাতাহাতি এবং বচসার এই ঘটনা। এমন চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা সাম্প্রতিক অতীতে কলকাতা ময়দানী ক্রিকেটে দেখা যায়নি। সিএবি কর্তারা পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খান। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রীতিমতো পুলিশ ডাকতে হয় ইডেন গার্ডেন্সে।
এই ঘটনা কেবল খেলার মাঠের বিতর্ক নয়, ক্রীড়াঙ্গনের নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বের ওপরও প্রশ্ন তুলেছে। সিএবি এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।