বয়স হয়েছে হাবল টেলিস্কোপের। এমন অবস্থায় কি এর ভুল হতে পারে? এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়েছে নাসার বিজ্ঞানীদের মাথায়। তারা এ শঙ্কার কথা বলেছেনও। সিদ্ধান্ত এল, এবার তবে জেমস ওয়েব ব্যবহার করা হোক- নাসার আধুনিকতম অস্ত্র। জেমস ওয়েবও যখন একই সুরে ‘কথা বলতে’ শুরু করল, তখন প্রশ্ন হচ্ছে গলদটা তাহলে কোথায়?
মহাবিশ্বে কি আসলেই অপ্রত্যাশিত বা অদ্ভূত কিছু ঘটছে?
ফের গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাবিশ্বের এমন কিছু অজানা বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে, যা রীতিমতো প্রভাবিত করে চলেছে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে।
নাসার সবচেয়ে শক্তিশালী মহাকাশ অবজারভেটরি ‘জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ’। গবেষকরা বলছেন, মহাবিশ্বের গভীর কিছু রহস্যের একটি ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করতে পারে এ টেলিস্কোপের নতুন পর্যবেক্ষণ বা গণনা।
বহু বছর ধরে মহাবিশ্বের অস্বাভাবিক এক বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে ছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাদের অনুমান ছিল, আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে মহাবিশ্ব দ্রুততর গতিতে প্রসারিত হচ্ছে। তবে এমনটি কেন হচ্ছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন তারা।
এবার মহাবিশ্বের সেই অপ্রত্যাশিত বা অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ, যার কথা আগেই বলেছিল নাসা’র হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। এর থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণে কোনো ত্রুটি ছিল না, বরং অদ্ভুতুরে ঘটনাটিই আসলে সত্যি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মানে হতে পারে মহাবিশ্বে কোনো অজানা শক্তি কাজ করছে, যা আমরা এখনও জানি না। যেমন– মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের অনুমান বা বোঝার ধারণাতেই ফাঁক থাকতে পারে। আর এর জন্য আমাদের প্রয়োজন হতে পারে ‘নতুন পদার্থবিদ্যার’।
“টেলিস্কোপের গণনা করা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার ও মহাবিশ্বে নিয়ে পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন আদর্শ মডেলের ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে পার্থক্যই আমাদের বলে দেয়, মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া এখনও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক অ্যাডাম রিস।
“এখন নাসার দুটি গুরুত্বপূর্ণ টেলিস্কোপের বিভিন্ন অনুসন্ধান থেকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, আমাদের অবশ্যই হাবল টেলিস্কোপের গণণাটিকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হলেও মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের আরও জানার এক বিস্ময়কর সুযোগ এটি।”
কয়েক দশক ধরে ‘হাবল ধ্রুবক’ গণনার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। মহাবিশ্ব যে গতিতে প্রসারিত হচ্ছে তাকে বলে ‘হাবল ধ্রুবক’। সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশিত হাবল ধ্রুবকের হার ও টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণের মধ্যে দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব। যেটিকে ‘হাবল টান’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তারা।
নতুন গবেষণায় টেলিস্কোপের সম্প্রসারণের পরিমাপ যাচাইয়ের জন্য প্রথম দুই বছরে নেওয়া জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের ডেটায় বড় একটি অংশের দিকে গবেষকরা নজর দেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
এজন্য তিনটি ভিন্ন ধরনের গণনা কৌশল ব্যবহার করেছেন তারা। একইসঙ্গে সুপারনোভা রয়েছে এমন ছায়াপথের দিকেও লক্ষ্য করে দেখেন সেগুলো কত দ্রুত গতিতে চলছে।
জেমস ওয়েবের এই নতুন পরিমাপের সঙ্গে হাবল টেলিস্কোপের করা আগের বিভিন্ন পরিমাপের মিল খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। ফলে তারা বুঝতে পেরেছেন, হাবল টেলিস্কোপের গণনায় কোনো ত্রুটি ছিল না। এর থেকেই ইঙ্গিত মেলে, এটি আসলে মহাবিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো বিষয় হতে পারে।
এখন গবেষকরা বলছেন, মহাবিশ্ব কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে আমাদের স্বীকৃত কাঠামোর বর্তমান ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল অফ কসমোলজি’তে কিছু ফোঁকফোকর রয়ে গেছে।
‘জেডব্লিউএসটি ভেলিডেটস এইচএসটি ডিসটেন্স মেজারমেন্টস: সিলেকশন অফ সুপারনোভা সাবস্যাম্পেল ডিফারেন্সস ইন জেডব্লিউএসটি এস্টিমেটস অফ লোকাল এইচজিরো’ শিরোনামে এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’-এ।