Science: এই প্রথম চাঁদের মাটিতে নামছে ইউরোপের তৈরি রোভার, জেনেনিন কী বলছে বিজ্ঞানীরা

মহাকাশ গবেষণায় নতুন মাইলফলক স্থাপন করে প্রথমবারের মতো চাঁদের বুকে সফলভাবে অবতরণ করলো ইউরোপের তৈরি রোভার ‘টেনেশাস’। বৃহস্পতিবার রাতে চাঁদের ‘মারে ফ্রিগোরিস’ অংশে (যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭:১৭ মিনিটে) এটি নিরাপদে পৌঁছেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জাপানের চাঁদ গবেষণা কোম্পানি আইস্পেস-এর ইউরোপীয় শাখা দ্বারা নির্মিত এই রোভারটি, যা কেবল সাড়ে ৩১ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ৫৪ সেন্টিমিটার উঁচু, ওজন মাত্র ৫ কেজি – একটি খালি স্যুটকেসের আকার ও ওজনের কাছাকাছি।

জানুয়ারিতে স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেট থেকে ‘রেজিলিয়েন্স’ নামক মহাকাশযানে উৎক্ষেপিত হয়ে গত ৬ মে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল এই মহাকাশযান। ‘টেনেশাস’ রোভারটি তার ক্ষুদ্র আকার সত্ত্বেও বেশ কিছু অদ্ভুত এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র নিয়ে চাঁদে পৌঁছেছে।

লুক্সেমবার্গ থেকে নিয়ন্ত্রণ, ইউরোপীয় উদ্ভাবনের প্রতীক:

বিশ্বের অন্যতম ছোট ও হালকা এই রোভারটি সম্পূর্ণরূপে লুক্সেমবার্গে অবস্থিত আইস্পেস-এর ইউরোপীয় শাখার কর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করবে। রোভারটির সামনের প্যানেলে বসানো একটি ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহার করে তারা প্রায় রিয়েল টাইমে ঘণ্টায় চার ইঞ্চি গতিতে এটি পরিচালনা করতে পারবে।

আইস্পেস-এর ইউরোপীয় শাখার প্রধান নির্বাহী ড. জুলিয়ান লামামি এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত সম্পর্কে বলেছেন, “এটা অনেক বড় একটি ব্যাপার। আমরাই এই রোভারটি ডিজাইন করেছি, তৈরি করেছি, প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছি এবং একে সম্পূর্ণভাবে লুক্সেমবার্গ থেকেই পরিচালনা করব।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা দেখাতে চাই, ইউরোপের বিভিন্ন মহাকাশ কোম্পানি নতুন ভাবনায় কাজ করে, যা ইউরোপের মহাকাশ অভিযানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।”

ড. লামামি আরও নিশ্চিত করেছেন যে, ‘টেনেশাস’ হবে প্রথম বেসরকারি রোভার, যা চাঁদের পৃষ্ঠে কাজ করবে। এটি প্রায় দশ দিন ধরে তার কার্যকারিতা বজায় রাখবে, এরপর “অতি ঠাণ্ডা ও অন্ধকার হয়ে যাওয়ায়” এটি বন্ধ হয়ে যাবে।

‘মহাজাগতিক ধূলি’ এবং শৈল্পিক ছোঁয়া:

রোভারটিতে একটি ছোট লাল ঘর রয়েছে, যা ডিজাইন করেছেন সুইডিশ শিল্পী মিকােল জেনবার্গ। এই লাল ঘরটি চাঁদের পৃষ্ঠে স্থাপন করা হবে ছবি তোলার জন্য। আইস্পেস-এর মতে, এটি “নতুন সম্ভাবনার শৈল্পিক ও মহাকাব্যিক গল্প” উপস্থাপন করবে। ড. লামামি জেনবার্গ সম্পর্কে বলেন, “নিজের শিল্পকর্ম ২৫ বছর ধরে চাঁদে পাঠানোর চেষ্টা করেছেন জেনবার্গ। তবে ২৫ বছর আগে কেবল সরকারি বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থাই চাঁদে যেতে পারত।” তিনি আরও বলেন, “আমরা অবশ্যই চাঁদ নিয়ে বিজ্ঞান, গবেষণা ও জ্ঞান বাড়াতে চাই। তবে আমরা অন্যদের জন্যও সুযোগ দিতে চাই, যারা মজার প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন।”

স্কাই নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোভারের সঙ্গে একটি মাটি তোলার যন্ত্রও রয়েছে, যা চাঁদের ধূলাবালি সংগ্রহ করবে। এই ধূলি যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাকে ৫ হাজার ডলারে বিক্রি করা হবে, যা হবে প্রথমবারের মতো পৃথিবীর বাইরে থেকে আনা কোনো সম্পদ বিক্রির ঘটনা – মহাকাশ বাণিজ্যে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন।

এছাড়াও, ল্যান্ডারে একটি ওয়াটার ইলেকট্রোলাইজার, খাবার পরীক্ষার জন্য একটি মডিউল, গভীর মহাকাশের বিকিরণ পরিমাপের যন্ত্র এবং একটি স্মরণিকা প্লেট রয়েছে।

এটি ছিল আইস্পেস-এর চাঁদে অবতরণের দ্বিতীয় চেষ্টা। এর আগে, ২০২৩ সালে প্রথমবার চেষ্টা করেছিল তারা, কিন্তু মিশনের শেষ মুহূর্তে ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এই সফল অবতরণ মহাকাশ গবেষণায় বেসরকারি খাতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy