
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB)-এর ঐতিহাসিক আইপিএল জয়ের উদযাপন আজ এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডিতে পরিণত হলো। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে আয়োজিত বিজয় উৎসবে পদপিষ্ট হয়ে অন্তত ১১ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় তীব্র শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (BCCI)। বিসিসিআই-এর সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া এই ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অভিহিত করেছেন এবং ভবিষ্যতে এমন উদযাপনের জন্য আরও ভালো পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
বিসিসিআই-র অবস্থান:
দেবজিৎ সাইকিয়া স্বীকার করেছেন যে, এই ঘটনা ‘কিছু ভুল’ থেকেই ঘটেছে। যদিও তিনি জানিয়েছেন যে, এই সেলিব্রেশন অনুষ্ঠানে বিসিসিআই-এর সরাসরি কোনো ভূমিকা ছিল না, তবুও এটিকে একটি ‘শেখানোর মতো শিক্ষা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সাইকিয়া বলেছেন, “যা ঘটেছে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মনে হয় কিছু ভুল হয়েছে। বিসিসিআই এর এতে কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু এটি শেখার মতো একটি শিক্ষা। ভবিষ্যতে এই ধরনের বিজয় উদযাপনের জন্য নতুন নিয়ম তৈরি করা হবে।”
কী ঘটেছিল সেই ভয়াবহ মুহূর্তে?
আইপিএলে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া আরসিবি-কে বরণ করে নিতে বুধবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে ভক্তদের ঢল নেমেছিল। হাজার হাজার আরসিবি সমর্থক বিরাট কোহলিদের এক ঝলক দেখার জন্য এবং তাদের জয়ের উল্লাসে সামিল হতে স্টেডিয়ামের চারপাশে ভিড় করেন। জনসমাগম এতটাই বেশি ছিল যে, ভিড় নিয়ন্ত্রণে চরম অব্যবস্থা দেখা যায়।
বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, স্টেডিয়ামের বাইরে পার্ক করা একটি গাড়িতে ভক্তদের বিপুল ভিড়, যার জেরে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে যেখানে একটি ড্রেনের উপরে একটি অস্থায়ী স্ল্যাবের উপর বহু মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন। অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে স্ল্যাবটি ভেঙে যায়, যার ফলে অসংখ্য মানুষ নীচে পড়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভাঙা স্ল্যাবের সঙ্গে বহু মানুষ পড়ে গেলে হুড়োহুড়ি ও পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাতেই ১১ জনের প্রাণহানি হয় এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন।
প্রশ্নবিদ্ধ আয়োজন ও নিরাপত্তা:
আরসিবি ক্রিকেটারদের সম্মানে কর্ণাটক রাজ্য ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (KSCA) এই বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। কিন্তু এই বিপুল জনসমাগমের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। স্টেডিয়ামের বাইরে ভিড় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে পুলিশকে উচ্ছৃঙ্খল ভক্তদের ওপর লাঠিচার্জ করতেও দেখা যায়।
স্টেডিয়ামের ভিতরে উল্লাস, বাইরে স্বজন হারানোর কান্না:
যখন স্টেডিয়ামের বাইরে স্বজন হারানোর কান্নায় বাতাস ভারী, ঠিক সেই সময়ই স্টেডিয়ামের ভিতরে ট্রফি নিয়ে বিরাট কোহলিদের উল্লাস করতে দেখা যায়। তবে, কর্ণাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই অনুষ্ঠান ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই শেষ করে দেওয়া হয়েছিল।
এই মর্মান্তিক ঘটনা আরসিবি-র জয়ের আনন্দকে শোকের চাদরে ঢেকে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ দেশের বিভিন্ন মহল থেকে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। এখন সবার নজর ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে কী ধরনের নতুন নিয়ম এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সেদিকেই।