
দোলের রাতে নদিয়ার ধুবুলিয়ায় এক মর্মান্তিক ও অমানবিক ঘটনায় শিউরে উঠেছে গোটা এলাকা। নিজের চার বছরের শিশু কন্যাকে রাস্তায় আছড়ে মেরে জলঙ্গি নদীর ব্রিজ থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাবা বুদ্ধদেব ঘোষ ওরফে বুদুর বিরুদ্ধে। ঘটনার পর অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে ধুবুলিয়া থানার পুলিশ এবং শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধুবুলিয়া থানার মায়াকোল এলাকার বাসিন্দা বুদ্ধদেব ঘোষ শুক্রবার সন্ধ্যায় কাজ থেকে ফিরে দেখেন তাঁর স্ত্রী বাড়িতে নেই। চার বছরের মেয়ে জানায়, মা মামার বাড়ি গেছে। এরপর মেয়েকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন বুদ্ধদেব। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তিনি শিশুটিকে প্রথমে রাস্তায় আছড়ে মারেন এবং তারপর জলঙ্গি ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দেন। বাড়ি ফিরে তিনি নিজের মাকে জানান, তিনি মেয়েকে আছড়ে মেরে ফেলেছেন।
এই ভয়ঙ্কর ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং অভিযুক্ত বুদ্ধদেবকে আটকে রেখে ধুবুলিয়া থানায় খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং জলঙ্গি ব্রিজের নিচে তল্লাশি চালিয়ে শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার করে। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পারিবারিক কলহের পটভূমি
প্রতিবেশীদের বয়ানে জানা গেছে, বুদ্ধদেবের স্ত্রীর সঙ্গে অন্য একজনের সম্পর্ক ছিল, যা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই বিবাদ লাগত। এই কারণেই শুক্রবার স্ত্রীকে বাড়িতে না দেখে বুদ্ধদেব ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত স্বীকার করেছেন, তিনি নিজের মেয়েকে হত্যা করেছেন।
পরিবার ও এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া
বুদ্ধদেবের স্ত্রী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। এলাকার স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ও বাসিন্দারা এই অমানবিক ঘটনায় দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। শিশু কন্যার মৃত্যুর খবরে ধুবুলিয়া এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পুলিশের তৎপরতা
ধুবুলিয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত চলছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও নৃশংস ঘটনা। আমরা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।” ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এই ঘটনা দোলের উৎসবের আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে। এলাকাবাসীরা এখন এই নৃশংসতার বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে।