
ভরা সন্ধ্যায়, লোকজনের ভিড়ে ঠাসা বসিরহাটের একটি বাজারে চলল গুলি, চলল কোপ! সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বসিরহাটের গোটরা পঞ্চায়েতের ঘোনা থানা এলাকায় লোমহর্ষক এই ঘটনায় খুন হলেন ২৪ বছর বয়সী এক তৃণমূল কর্মী, যাঁর নাম আনার হোসেন গাজি। ভর সন্ধ্যায় এমন বীভৎস ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বসিরহাটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, নৃশংসতা যেন হার মানিয়েছে সব সীমা। প্রতিদিনের মতোই আনার হোসেন গাজি একটি চায়ের দোকানের সামনে বাইকে বসে চা খাচ্ছিলেন। আশেপাশে তখন বাজারের স্বাভাবিক ভিড়। হঠাৎই, যেন সিনেমার কায়দায় ৫ থেকে ৬ জন দুষ্কৃতী তাঁকে ঘিরে ধরে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুষ্কৃতীরা তিন রাউন্ড গুলি চালায় আনারকে লক্ষ্য করে। গুলির শব্দে যখন বাজারের লোকজন হতভম্ব, তখনও দুষ্কৃতীদের উন্মত্ততা থামেনি। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো হয় তাঁর নিথর দেহকে। চোখের পলকে এই নারকীয় কাণ্ড ঘটিয়ে দুষ্কৃতীরা ভিড়ের মধ্যেই মিশে চম্পট দেয়। কেউই কিছু বুঝে উঠতে পারেনি, বা বুঝে উঠলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায়নি।
এই মুহূর্তে গোটা বসিরহাট জুড়ে একটাই প্রশ্ন ঘুরছে— কেন এমন নির্মমভাবে খুন করা হলো আনার হোসেন গাজিকে? পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে পুরনো শত্রুতা। তবে, ঠিক কী ধরনের শত্রুতা বা কাদের সঙ্গে এই শত্রুতা, সে বিষয়ে পুলিশ এখনও স্পষ্ট কিছু জানায়নি। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। জনবহুল একটি বাজারে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দুষ্কৃতীদের অধরা থাকা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে স্থানীয়রা।
সোমবার রাতের এই ঘটনা বসিরহাটের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন চিহ্ন তুলে দিয়েছে। যেখানে ভরা বাজারে, অসংখ্য মানুষের চোখের সামনে একজন মানুষকে গুলি করে এবং কুপিয়ে খুন করা হয়, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? এই ঘটনার পর বসিরহাটের সাধারণ মানুষের মনে তীব্র আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পুলিশ কি দ্রুত দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে পারবে, নাকি এই হত্যাকাণ্ডও অন্যান্য ঘটনার মতো ধামাচাপা পড়ে যাবে— সেদিকেই এখন তাকিয়ে আছে বসিরহাটবাসী।