
স্ত্রীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক সন্দেহে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড; পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি, অভিযুক্ত ছিল সন্দেহবাতিক এবং নিয়মিত নির্যাতনকারী।
হালিশহর, ১০ জুন ২০২৫: পরকীয়ার সন্দেহে স্ত্রীর গলা কেটে খুনের এক নৃশংস ঘটনায় স্তম্ভিত উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহর। নিজের বাড়ির ছাদের টালি খুলে ঘরে ঢুকে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে বীজপুর থানা এলাকার হালিশহর ভূতবাগান নতুনপল্লিতে। পুলিশ অভিযুক্ত উজ্জ্বল মণ্ডলকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে।
নিহত নারীর নাম জ্যোৎস্না মণ্ডল (৪৫)। তাঁদের ছোট মেয়ে, কোয়েল মণ্ডল, সকালে ফোন পেয়ে জানতে পারেন বাবা তাঁর মাকে খুন করেছেন। কোয়েল জানান, বাবা-মায়ের মধ্যে প্রায়শই ঝগড়া হতো এবং বাবা তার মাকে একদম পছন্দ করতেন না। উজ্জ্বল মণ্ডল ছিলেন চরম সন্দেহবাতিক, এমনকি বেয়াই এবং জামাইদের সঙ্গেও স্ত্রীর সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ করতেন।
কোয়েল কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “বাবা হয়ে আমাদের জন্য কিছুই করেনি। উল্টে আমাদের মাকে খুন করে ফেলল। ওই লোকের ফাঁসি হোক, আমরা সেটাই চাই।”
সোমবার রাতে জ্যোৎস্না মণ্ডল ঘরের ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে শুয়েছিলেন। অভিযোগ, উজ্জ্বল মণ্ডল নিজের ঘরের ছাদের টালি খুলে ভেতরে ঢোকেন এবং তার স্ত্রীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করেন। ভোরে, অভিযুক্তের পুত্রবধূ, পূজা মণ্ডল, প্রথম শাশুড়িকে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন।
পূজা মণ্ডল জানান, “আমার শ্বশুর সব সময়ই শাশুড়িকে অত্যাচার করতেন, আর শ্বশুরের দিদি তাতে মদত দিতেন। শাশুড়িকে খুব সন্দেহ করতেন, অথচ শাশুড়ি মোটেই এমন ছিলেন না।” তিনি আরও বলেন, “আজ ঘরের টালি খোলা দেখে প্রথমে ভাবি চোর ঢুকেছে। তার পরে ঘরের দরজা ঠেলে ঢুকে দেখি এই অবস্থা।”
পূজা আরও জানান, এর আগেও কালীপুজোর সময় উজ্জ্বল তার শাশুড়িকে মারধর করেছিলেন এবং তার নামে থানায় অভিযোগও রয়েছে। এলাকার লোকজনও পুলিশকে জানিয়েছেন, উজ্জ্বল প্রায়শই তার স্ত্রীকে মারধর করতেন এবং মানসিক নির্যাতন চালাতেন।
মঙ্গলবার সকালে খবর পেয়ে বীজপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিক গণেশ বিশ্বাস নিশ্চিত করেছেন, “খুনের অভিযোগে উজ্জ্বল মণ্ডলকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। কী ভাবে কী ঘটেছে, আমরা তা পুনর্নির্মাণ করব।”
মেয়ের এই মর্মান্তিক পরিণতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জ্যোৎস্নার মা ডলি চক্রবর্তী। শোকাহত ডলি দেবী বলেন, “এ তো গলা কাটা নয়, যেন কচু কাটা করেছে। আমরা ফাঁসি চাই উজ্জ্বলের। আমার একটাই মেয়ে, আমার আর কেউ নেই।”
এই ঘটনা আবারও পারিবারিক হিংসা এবং সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ঘটা অপরাধের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরল, যা সমাজের গভীরে বাসা বাঁধা মানসিকতার দিকে আঙুল তুলেছে।