OMG! নদীতে নামতেই তলিয়ে গেল ১৩ বছরের কিশোর, দোলের দিন সন্তান হারালেন বাবা-মা

দোল উৎসবের আনন্দের মাঝে মেদিনীপুর শহরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। শুক্রবার দুপুরে কংসাবতী নদীতে স্নান করতে নেমে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হল ১৩ বছরের কিশোর সোহন দাসের। বিকেল ৪টা নাগাদ স্থানীয়দের সহায়তায় তার দেহ উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। ঘটনায় শোকস্তব্ধ এলাকা।

মৃত সোহন মেদিনীপুর শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের মির্জাবাজার সংলগ্ন কবিরাজপাড়ার বাসিন্দা। সে বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র এবং বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল। ওয়ার্ড কাউন্সিলর মহম্মদ সাইফুল জানিয়েছেন, “সোহনের এই মৃত্যুতে গোটা এলাকা শোকে মুহ্যমান। ওর বাবা-মা ভেঙে পড়েছেন।”

কী ঘটেছিল?
জানা গেছে, শুক্রবার দুপুর ২টো নাগাদ দোল খেলার পর সোহন তার তিন বন্ধুর সঙ্গে কংসাবতী নদীর আমতলা ঘাটে স্নান করতে যায়। সাঁতার না জানা সত্ত্বেও সে নদীতে নামে এবং ঘাট থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই সে পানিতে তলিয়ে যায়। তার বন্ধুরা চিৎকার শুরু করলে স্থানীয়রা ছুটে আসেন। ঘটনার খবর পেয়ে সোহনের পরিবার ও কাউন্সিলর মহম্মদ সাইফুল ঘটনাস্থলে পৌঁছন।

স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশ আসার আগেই নদীতে নেমে সোহনের খোঁজ শুরু করেন। বিকেল ৪টার দিকে কোতোয়ালি থানার পুলিশ ও স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় তার দেহ উদ্ধার হয়। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ:
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছতে অনেকটা দেরি করেছে। এক বাসিন্দা বলেন, “প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা পর পুলিশ এসেছে। আমরাই নিজেদের ঝুঁকি নিয়ে সোহনকে খুঁজে বের করেছি।” কাউন্সিলর মহম্মদ সাইফুল বলেন, “আমতলা ঘাটে আগেও এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুরসভার উচিত এই ঘাটটি সংস্কার করা এবং সারাক্ষণ একটি উদ্ধারকারী নৌকো রাখা।”

প্রতিক্রিয়া ও দাবি:
ঘটনাস্থলে পৌঁছে কোতোয়ালি থানার আইসি অমিত সিনহা মহাপাত্র ও পুরপ্রধান সৌমেন খান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। পুরপ্রধান সৌমেন খান বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দা কেরামত সাহাকে ধন্যবাদ। তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সোহনের দেহ উদ্ধার করেছেন। আমরা মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছি, মেদিনীপুরে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ স্থায়ী ডুবুরি দলের ব্যবস্থা করতে।” তিনি আরও জানান, এই ঘটনা এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরেছে।

শোকের ছায়া:
একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে সোহনের বাবা-মা শোকে ভেঙে পড়েছেন। প্রতিবেশীরা জানান, “সোহন খুব হাসিখুশি ছিল। দোলের দিনে এমন ঘটনা কেউ ভাবতে পারেনি।” পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পেছনে কোনও দুরভিসন্ধি আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হবে।

দোলের আনন্দে মেতে ওঠা মেদিনীপুর শহরে এই ঘটনা শোকের পরিবেশ তৈরি করেছে। স্থানীয়রা নদীঘাটে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy