OMG! ঘরের ভেতরে সাত ফুটের অজগর, দু’দিন নিদ্রাহীন ভাবে সময় কাটালো রায় পরিবার

প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে ঘরের মধ্যেই একটি বিশাল অজগরের সঙ্গে সহাবস্থান। এই অভূতপূর্ব ও উদ্বেগজনক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে দিন কেটেছে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি ব্লকের আনন্দনগর এলাকার এক পরিবারের। টানা দু’দিন লুকোচুরি খেলার পর অবশেষে পরিবেশপ্রেমীরা এসে উদ্ধার করেন অতিকায় সাপটিকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী শঙ্কর রায়ের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার রাতে অন্যান্য দিনের মতোই সপরিবারে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমোতে গিয়েছিলেন শঙ্করবাবু। রাত আনুমানিক সাড়ে বারোটা নাগাদ ঘরের বেড়ার উপর থেকে অদ্ভুত কিছু শব্দ শুনতে পান তিনি। মোবাইলের আবছা আলো ফেলে তিনি হলদে-কালো রঙের লম্বাটে কিছু একটা দেখতে পান।

শঙ্করের ডাকে বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা ছুটে আসেন। হলদে-কালো রঙের দীর্ঘ প্রাণীটি যে আসলে একটি অজগর সাপ, তা বুঝতে কারও দেরি হয়নি। ততক্ষণে সাপটি জানলা দিয়ে ঘরের সিলিংয়ের উপরে উঠে গা ঢাকা দিয়েছে। এই ঘটনার পর রায় পরিবার আর ঘরের ভেতরে ঘুমোনোর সাহস পায়নি। গোটা রাত তারা বারান্দাতে জেগেই কাটায়।

বুধবার সকালে শঙ্করের মেয়ে পূজা অজগরটিকে বাড়ির বাইরের টিনের চালের নীচে নেমে আসতে দেখলে স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী সংস্থাকে খবর দেওয়া হয়। সর্প বিশারদ নন্দু রায় সহ ময়নাগুড়ির পরিবেশপ্রেমী সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। অজগরের খোঁজে দিনভর তল্লাশি চললেও বুধবার সারাদিন সেটির হদিস মেলেনি। সাপের ভয়ে রায় পরিবারের জীবনযাত্রা থমকে যায়। শঙ্করের ছেলে বাবাই বলেন, “ঘুম তো দূরের কথা, এক কথায় বাড়িতে উনুন জ্বালানো বন্ধ হয়ে যায়। সব সময়ে টেনশন।” শঙ্করের স্ত্রী মিনতি বলেন, “বাধ্য হয়ে দুটো বেলা কেটে যাওয়ার পরে বারান্দায় রান্না–খাওয়া সারতে বাধ্য হই। সন্ধে নামতে আতঙ্ক নিয়েই ঘরে ঢুকি।”

বুধবার রাত গড়াতে ফের বিপত্তি। বাবাই আবারও অজগরটির দর্শন পান সিলিংয়ের মধ্যে। ফের খবর পেয়ে ছুটে আসে পরিবেশপ্রেমী সংস্থা। আবারও চলতে থাকে সাপটিকে ধরার জন্য লুকোচুরি। অবশেষে গভীর রাতে পরিবেশপ্রেমীরা অজগরটিকে কাবু করতে এবং ধরতে সফল হন।

পরিবেশপ্রেমী সংস্থার সদস্য নন্দু রায় জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া অজগরটি প্রায় সাত ফুট লম্বা এবং বার্মিজ পাইথন প্রজাতির। তিনি বলেন, “অজগর মূলত বিষহীন সাপ। তবুও সচেতন থাকা ভীষণ ভাবে প্রয়োজন।” বৃহস্পতিবার গোরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের বনকর্মীদের হাতে উদ্ধার হওয়া অজগরটিকে তুলে দেওয়া হয়।

বন দপ্তর সূত্রে খবর, রায়দের বাড়ির কাছে একটি নদী রয়েছে। সম্ভবত সেই নদী থেকেই সাপটি এখানে চলে এসেছিল এবং ঘুরতে-ঘুরতে বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল। দু’দিনের তীব্র আতঙ্কের পর বিশাল অজগরটি উদ্ধার হওয়ায় রায় পরিবার অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy