
উত্তর ২৪ পরগণার বনগাঁ থানার চাঁদা জামতলা এলাকায় সম্পত্তি ও জমি নিয়ে বিবাদের জেরে এক নৃশংস খুনের ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন প্রতিবেশীরা। অভিযোগ, হানেফ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে তাঁর ভাইপো ইয়ানুর ও বউদি আজিফা ইট ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে খুন করেছেন। ঘটনার পর বনগাঁ থানার পুলিশ দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে।
দীর্ঘদিনের বিবাদ
হানেফ মণ্ডলের বাড়ি চাঁদা জামতলা এলাকায়। তাঁর ভাইয়ের পরিবারও একই এলাকায় বসবাস করে। জানা গেছে, হানেফের সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের পরিবারের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল। এর আগেও এই নিয়ে একাধিকবার অশান্তি হয়েছে, তবে সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। বুধবার সকালে এই বিবাদ চরমে পৌঁছে যায়।
ঘটনার বিবরণ
প্রতিবেশীদের বয়ান অনুযায়ী, সকালে জমি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ফের ঝামেলা শুরু হয়। হানেফের বউদি আজিফা ও তাঁর ছেলে ইয়ানুর প্রথমে হানেফের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। এরপর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে তাঁরা হানেফকে মারধর শুরু করেন। প্রতিবাদ করায় আজিফা ও ইয়ানুর কাছাকাছি পড়ে থাকা ইট ও হাতুড়ি দিয়ে হানেফকে আঘাত করতে থাকেন। রক্তাক্ত অবস্থায় হানেফকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
হানেফের বউমা মুসলিমা মণ্ডল বলেন, “সকালে বাবা বাজার থেকে ফিরে টাকা তুলতে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখেন, আমাদের জায়গায় ইয়ানুর ও তাঁর মা সিঁড়ি বানাচ্ছেন। ওই জমি আমাদের। বাবা তাঁদের বারণ করেন। আমরাও বাইরে গিয়ে কথা বলতে শুরু করি। কথা কাটাকাটির মধ্যে হঠাৎ আজিফা আমার শ্বশুরকে চড় মারেন। বাবা ইয়ানুরের গায়ে হাত তুলতে গেলে ওরা দুজনে মিলে তাঁকে মাটিতে ফেলে মারধর করেন। ইট ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে তাঁকে মেরে ফেলেন।”
প্রতিবেশীদের স্তম্ভিত প্রতিক্রিয়া
এই নৃশংস ঘটনায় এলাকার বাসিন্দারা হতবাক। এক প্রতিবেশী বলেন, “এত বড় ঘটনা এখানে কখনও দেখিনি। জমি নিয়ে ঝগড়া হতো, কিন্তু এভাবে খুন করবে, ভাবতেও পারিনি।” ঘটনার নৃশংসতায় সবাই ক্ষুব্ধ ও ভীত।
পুলিশের পদক্ষেপ
ঘটনার খবর পেয়ে বনগাঁ থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হানেফের পরিবারের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত ইয়ানুর ও আজিফাকে গ্রেফতার করেছে। বনগাঁ থানার এক আধিকারিক জানান, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জমি নিয়ে বিবাদই এই খুনের কারণ বলে মনে হচ্ছে। বিস্তারিত তদন্তের পর আরও তথ্য প্রকাশ করা হবে।”
পরিবারের দাবি
হানেফের পরিবার অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে। মুসলিমা মণ্ডল বলেন, “আমরা ন্যায় চাই। এমন নৃশংস কাজের শাস্তি হওয়া উচিত।”
এই ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ চিত্র উঠে আসবে।