মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে পাতাতেন বন্ধুত্ব। বিশ্বস্ততা অর্জনের পর তাদের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দিতেন ভয়ঙ্কর বিষ সায়ানাইড। এভাবে একজন-দু’জন নয়, অন্তত ১৪ জনকে নিজের শিকারে পরিণত করেছেন। এমনই ভয়ানক এক সিরিয়াল কিলারের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হয়ে গেল সম্প্রতি।
গত বুধবার (২০ নভেম্বর) সারারাত রংসিউথাপর্ন নামে ওই নারী সিরিয়াল কিলারকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন থাইল্যান্ডের একটি আদালত।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, খুনের আগে বন্ধুদের থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে, গয়না চুরি করত সারারাত। ১৪টির মধ্যে প্রথম খুনের ঘটনার তদন্ত চলছে। তাতেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল তাকে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরের এপ্রিলে বন্ধু সিরিপর্ন খানওংকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাঙ্ককের পশ্চিমে অবস্থিত রাচাবুরি প্রদেশে ভ্রমণ করতে গিয়েছিল সারারাত। সেখানে একটি নদীতে তারা একটি বৌদ্ধ আচারে অংশ নিয়েছিলেন। সেখান থেকে সিরিপর্নের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের পর তার শরীরে সায়ানাইডের চিহ্ন পাওয়া যায়। তখনই সারারাতকে গ্রেফতার করা হয়।
তার সাবেক স্বামী আবার পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন। সারারাতের গ্রেফতারের পর জানা যায়, বিচ্ছেদের পরও সাবেক স্বামীর সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল এবং তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
এ ঘটনায় থাইল্যান্ডজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিশেষ করে সায়ানাইড বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর বেশ কয়েকটি অমীমাংসিত মামলা নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়।
পুলিশ আগে বলেছিল, সিসিটিভি ফুটেজে অচেতন হয়ে পড়া এবং মারা যাওয়ার আগে সিরিপর্নকে সারারাতের সঙ্গে দেখা গেছে। ময়নাতদন্তে সিরিপর্নের শরীরে সায়ানাইডের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ বেশ কয়েকটি হত্যার ঘটনার সঙ্গে মিল পান। এসব হত্যার ঘটনায়ও হত্যার শিকার ব্যক্তি সারারাতের সঙ্গে খাবার বা পানীয় খেয়েছিলেন। এরপর মারা গেছেন।
সারারাত গ্রেফতার হওয়ার পর একজন নারী পুলিশের কাছে আসেন এবং অভিযোগ করেন, কয়েক বছর আগে তাকেও বিষপ্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন সারারাত। ২০২০ সালের ওই ঘটনায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। ভাগ্যক্রমে জীবন রক্ষা পেয়েছিল তার।
এদিকে ব্যাংককের আদালতে শুনানির সময় সারারাত সাক্ষ্য দেননি। আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ছাড়াও তিনি যেসব জিনিস চুরি করেছেন, সেগুলোর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।
সারারাত তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন এবং আপিল করার পরিকল্পনা করছেন।
সারারাতের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার পর আদালতে সিরিপর্নের মা কিয়াচানাসিরি মেয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘তুমি ন্যায়বিচার পেয়েছ। এই পৃথিবীতে আজও ন্যায়বিচার আছে।’
প্রসঙ্গত, সায়ানাইড শরীরে প্রবেশ করলে তা অক্সিজেন কোষকে প্রভাবিত করে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন ওই ব্যক্তি। সায়ানাইডের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট এবং বমি হওয়া। এই বিষের ছোট্ট একটি ডোজও মানুষের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। আর পরিমাণ বেশি হলে মাত্র এক সেকেন্ডের মধ্যেই মৃত্যু ঘটাতে পারে।
থাইল্যান্ডে বিষাক্ত এই পদার্থ ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রিত। অনুমোদন ছাড়া কেউ এটি কাছে রাখলেই তার দুই বছরের জেল হতে পারে।
সূত্র: বিবিসি