২৫০ জন যাত্রী নিয়ে মাঝ আকাশে উড়ছে বিমান। অথচ ককপিটে বসে ঘুমাচ্ছেন দুই জন পাইলট। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে নিউইয়র্ক থেকে রোমগামী আইটিএ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে। পরে অবশ্য কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছায় বিমানটি।
গত এপ্রিল মাসে এই ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি তদন্তে সেটি বেরিয়ে আসে। পরে বরখাস্ত করা হয় অভিযুক্ত পাইলটকে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এবিসি৭ বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ইতালির রাজধানী রোমের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল আইটিএ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট। তবে মাঝ আকাশে থাকার সময় পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে ফ্রান্সের বিমান কন্ট্রোল রুম।
অনেকক্ষণ ধরে দুই পাইলটের কারও কাছ থেকে কোনো উত্তর না পাওয়ায় তারা নিশ্চিত হয়ে যান, বিমানটি অপহরণ করা হয়েছে। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে সঙ্গে সঙ্গে বিমানটির পাশে দু’টি ফাইটার জেটও পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়। তবে টানা ১০ মিনিট পর একপর্যায়ে পাইলটদের সাড়া মেলে।
জিজ্ঞাসাবাদ করায় জানা যায়, বিমান চালাতে গিয়ে ঘুমিয়েই পড়েছিলেন একজন পাইলট। শুধু তাই নয়, সঙ্গে থাকা আরও এক পাইলটও তখন ঘুমাচ্ছিলেন। অর্থাৎ দুজনেই একসঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তদন্তে বিষয়টি বেরিয়ে আসতেই ক্যাপ্টেনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় বিমান সংস্থাটি।
তদন্তে বলা হয়েছে, গত ৩০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া আইটিএ এয়ারওয়েজের ওই ফ্লাইটের উভয় পাইলট একইসঙ্গে ককপিটে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। দুইজন পাইলটই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন এয়ারবাস ৩৩০ মডেলের ওই ফ্লাইটটি ফ্রান্সের ওপর দিয়ে ৩৮ হাজার ফুট উচুতে উড়ছিল।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ফ্লাইটের দুইজন পাইলটের একজন নিজের নির্ধারিত ঘুমের বিরতির সময় ঘুমিয়েছিলেন ঠিকই, তবে দায়িত্বপালনের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েন বিমানের ক্যাপ্টেনও। তবে প্রায় ১০ মিনিট ধরে কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা করেন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা।
তারা তদন্তকারীদের বলেছেন, প্রায় ১০ মিনিট ধরে বিমানের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ফলে সম্ভাব্য একটি সন্ত্রাসী হামলার বা অনুরূপ কোনো ঘটনার আশঙ্কার মধ্যে তারা বিমানটিকে আটকানোর জন্য যুদ্ধবিমান প্রস্তুত করেন। কিন্তু পাইলটরা শেষ পর্যন্ত সাড়া দেন।
আইটিএ এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, মাঝ আকাশে ফ্লাইটের রেডিও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত ক্যাপ্টেন। কিন্তু তদন্তকারীরা ফ্লাইটের ক্যাপ্টেনের বক্তব্য এবং অভ্যন্তরীণ তদন্তের ফলাফলের মধ্যে শক্তিশালী অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছেন।
এক বিবৃতিতে ইতালীয় এই এয়ারলাইন্সটি বলেছে, দায়িত্বপালনের সময় ক্যাপ্টেনের আচরণ প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। আর তাই ফ্লাইটটি রোমে নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হলেও আইটিএ এয়ারওয়েজ ক্যাপ্টেনকে বরখাস্ত করে।