এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তার স্ত্রী। তবে সেই হত্যা মামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষী কোনো মানুষ ছিল না, সাক্ষী ছিল নিহত সেই ব্যক্তির পোষা তোতা। তার সাক্ষীর ভিত্তিতেই বিচারকরা ২০১৫ সালের খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেন ৪৯ বছর বয়সি গ্লেনা ডুরামকে।
২০১৫ সালের মে মাসে আমেরিকার ডেট্রয়েটে খুন হন ৪৬ বছর বয়সি মার্টিন ডুরাম নামে এক ব্যক্তি। খুব কাছ থেকে পাঁচটি গুলি করা হয় তাকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মার্টিন ডুরামের। অন্য দিকে তার স্ত্রী গ্লেনা ডুরাম মাথায় আঘাত পান।
মামলা ওঠে আদালতে। কে খুন করল মার্টিন ডুরামকে? মার্টিনের প্রাক্তন স্ত্রী ক্রিস্টিনার দাবি, প্রাক্তন স্বামীকে খুন করেছেন তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী গ্লেনা। তার পর নিজেকে আঘাত করে মামলা ঘোরাতে চেয়েছেন। কিন্তু তার প্রমাণ কী?
আদালতে সাক্ষী হিসেবে আনা হয় মৃত মার্টিনের পোষা তোতাটিকে। নাম তার ‘বাড’। মার্টিনের প্রাক্তন স্ত্রীর অভিযোগ, গুলি চালানোর সময় সামনেই ছিল তোতাটি। মার্টিনকে গুলি চালানোর সময় ছটফট করে ওঠে সে।
তোতাটিকে সদ্য কথা বলা শিখিয়েছিলেন মার্টিন। মালিকের দিকে তার মালকিন বন্দুক তাক করতেই না কি বাধা দেয় সে। বলে ওঠে ‘মেরো না’। তার গলার শব্দ ছিল ঠিক মার্টিনের মতোই।
প্রাক্তন স্বামীর মৃত্যুর পরে ক্রিস্টিনা ওই পাখিটিকে নিয়ে যান। কারণ, মার্টিনের পর তোতাটি সবচেয়ে বেশি চিনত তাকেই।
ভরা আদালতে পাখির সাক্ষ্য নেয়া হয়। কিন্তু একটা পাখির সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কি কাউকে অপরাধী করা যায়? বাদী এবং বিবাদী পক্ষের মধ্যে শুরু হয় আইনি জেরা।
দীর্ঘ সময় ধরে তর্ক-বিতর্ক চলে। প্রথমে আদালত জানিয়ে দেয় একটা তোতার সাক্ষ্য নিয়ে কাউকে অপরাধী করা যায় না। অগত্যা মামলা খারিজ হয়।
কিন্তু আবার আদালতে ওঠে মামলা। আদালতে বলতে ওঠেন ক্রিস্টিনা। মার্টিনের মৃত্যুর পর তোতাটি ছিল তার কাছে। সে নাকি মাঝে মধ্যেই বলে ওঠে ‘ফা…ডোন্ট শুট’ (গুলি কোরো না)।
ক্রিস্টিনার দাবি, তাদের পোষ্য ‘বাড’-এর মনে থেকে গিয়েছে সে দিন তার মালিককে খুনের ঘটনা। তাই সে হঠাৎ হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে বলে, ‘গুলি কোরো না’।
দীর্ঘ সওয়াল জবাবের পর স্বামীকে খুনের অপরাধে গ্লেনাকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।
মার্টিনের পোষ্যটি আফ্রিকার গ্রে প্যারট (আফ্রিকার ধুসর প্রজাতির তোতা)।বহু গবেষকের দাবি, আফ্রিকার এই বিশেষ প্রজাতির পাখি, ২০০টির বেশি শব্দ মনে রাখতে পারে। এরা বেশ বুদ্ধিমান।
‘বাড’ সেই আফ্রিকান প্রজাতির তোতা, যার স্মৃতিশক্তি বেশ ভাল। তাই মালিকের গলায় তার ডেকে ওঠা ‘ফা… ডোন্ট শুট’ শব্দবন্ধই হয়ে উঠল এই বিচার প্রক্রিয়ার সাক্ষী। কিছু দিনের মধ্যেই স্বামী খুনে দোষী সাব্যস্ত হওয়া গ্লেনা ডুরামের সাজা ঘোষণা করবে আদালত।
খুনের মামলায় সাক্ষী দিচ্ছে পাখি, গল্প-উপন্যাসে এমন বহু কাহিনি পাওয়া যায়। বাস্তবেও এমন ঘটনা পাওয়া গিয়েছে। তাতে নতুন সংযুক্তি এই আফ্রিকান গ্রে প্যারটের সাক্ষ্যদান।