৪৬০ কোটি বছরের কাছাকাছি সময়কার গ্যালাক্সির ছবি তুলেছে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। যা এক বিস্ময়কর ঘটনা বটে! মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা জানিয়েছে, মহকাশে বিস্ফোরণের ঠিক পর পরই যে নক্ষত্রপুঞ্জ তৈরি হয়েছিল, তারই ছবি এটি।
নিউইয়র্ক সময় সোমবার বিকেল ৫টায় নাসার ফ্ল্যাগশিপ মিশনখ্যাত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে তোলা এ ছবিটি উন্মোচন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সুপ্রাচীন এ গ্যালাক্সি নিয়ে হইচই পড়ে গেছে হোয়াইট হাউসেও। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, নাসা অভূতপূর্ব কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও মানব সভ্যতার জন্য এটি ঐতিহাসিক দিন।
এ ছবি নিয়ে কেন এত শোরগোল; এর বিশেষত্ব কি? কারণ এটি ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগের সুদূর এক মহাবিশ্বের অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য। এটি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের প্রথম ফুল-কালার ডিপ ফিল্ড ইমেজ, এবং সেই সঙ্গে মানবজাতির ইতিহাসে দূর মহাবিশ্বের ডিপেস্ট ও শার্পেস্ট ইনফ্রারেড ইমেজ।
ডিপ ফিল্ড ইমেজ হলো যখন একটা অ্যাস্ট্রোনমিকাল ছবি তুলতে আকাশের নির্দিষ্ট একটি অংশে অনেক লম্বা সময় ধরে এক্সপোজার রাখা হয়। এ ছবির ক্ষেত্রে সেটা সাড়ে ১২ ঘণ্টা। এবং এ তো কেবল শুরু; হাবল টেলিস্কোপ যেসব জ্যোতিষ্ক ‘চোখে’-ই দেখতে পেত না, সেটাও অনায়াসে দেখতে পাচ্ছে জেমস ওয়েবের নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা। ছবিতে এটা Galaxy Cluster SMACS 0723।
প্রায় ৪৬০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাংয়ের পর কীভাবে এই বিশ্ব তৈরি হয়েছিল সে খবর খুঁজে আনার দায়িত্ব জেমস ওয়েবের। কীভাবে জন্ম-মৃত্যু হয় তারাদের, নক্ষত্রপুঞ্জের জন্ম ইতিহাস, গ্রহদের গোপন কথা, ছায়াপথের ফিসফিসানি সবই জেনে-বুঝে পৃথিবীতে খবর পাঠাবে নাসার দূরবীন। সেই জন্মের পর থেকে মহাকাশে যে ক্রমবর্ধমান বিবর্তন হয়ে চলেছে সেই ধারাকে পর পর সাজিয়ে বিশ্লেষণ করবে জেমস ওয়েব।
গত ডিসেম্বরেই মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। তারও আগে থেকে এই শক্তিশালী টেলিস্কোপকে নিয়ে তীব্র কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। মহাকাশ গবেষণায় নতুন যুগের সূচনা করেছে জেমস। টেলিস্কোপটির ১০ বছরের পরিকল্পিত মিশনের মাত্র ৬ মাস ১৬ দিন অতিবাহিত হলো; ভবিষ্যতেও অসংখ্যবার বিশ্বকে চমকে দিতে পারে এটি।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের গুরুত্ব বুঝতে হলে সেটির পূর্বসূরি হাবল মহাকাশ টেলিস্কোপের অবদান জানতে হবে। প্রযুক্তির অগ্রগতির কল্যাণে এবার হাবলের তুলনায় আরো অনেক শক্তিশালী এই চোখ মানুষকে অভাবনীয় ক্ষমতা দিচ্ছে।
তথ্য সহযোগিতায়: নাসা, আইজ্যাক শুল্টজ,