
মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে যুদ্ধের কালো মেঘ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলায় উভয় পক্ষেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অনমনীয় মনোভাব সংঘাতকে এক নতুন বিপজ্জনক মাত্রায় নিয়ে গেছে।
শনিবার রাতে ইরানের বাহিনী ইসরায়েলের দিকে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এই হামলায় ইসরায়েলে আটজন নিহত এবং ১৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। বিশেষ করে জেরুজালেম এবং তেল আবিব লক্ষ্য করে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বহু বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, শনিবার রাত থেকে রবিবার ভোরের মধ্যে ইরান থেকে পর পর ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শনিবার রাতে তেল আবিবের আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র দেখা গেছে। ইসরায়েলের শক্তিশালী ‘আয়রন ডোম’ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করলেও, কিছু ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিব এবং জেরুজালেমের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আছড়ে পড়েছে, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রবিবার ভোর থেকে তেল আবিব ও জেরুজালেমে অনবরত সাইরেন বেজেছে, যা সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল ইরানের তেলের ভান্ডার লক্ষ্য করে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। নেতানিয়াহুর বাহিনীর হামলায় ইরানে কমপক্ষে ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে তেহরানের একটি ১৪ তলা আবাসনে ২০ শিশু সহ ৬০ জন নিহত হওয়ার মর্মান্তিক খবরও পাওয়া গেছে। ইসরায়েল ইরানের জ্বালানি পরিকাঠামো, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সদর দপ্তর এবং পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যা ইরানের অর্থনীতি ও সামরিক সক্ষমতার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই সংঘাতের মধ্যে উভয় দেশের শীর্ষ নেতৃত্বই অনমনীয় অবস্থান বজায় রেখেছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়েছেন, “যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।” অন্যদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা খামেনি ইসরায়েলকে “কঠোর জবাবের জন্য প্রস্তুত থাকার” হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ইরান হাইফা সহ ইসরায়েলের প্রধান শহরগুলিতে প্রায় ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছে, আর ইসরায়েল ইরানের গুরুত্বপূর্ণ তেল ও সামরিক স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। দুই শক্তিধর দেশের এই মুখোমুখি অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যকে এক দীর্ঘস্থায়ী ও ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল এই সংঘাত বন্ধের জন্য বারবার আহ্বান জানালেও, পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।