
লকডাউনের ক্লান্ত মন আর একঘেয়ে জীবনযাত্রার মাঝে এক বুক স্বস্তি নিয়ে এসেছিল Prime Video-র ওয়েব সিরিজ ‘Panchayat’। ফুলেরা গ্রামের সরলতা, মানুষের হাস্যরস আর মাটির গন্ধ এতটাই হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিল যে চরিত্রগুলো এখন দর্শকের নিত্যসঙ্গী। সেই সফর এবার চতুর্থ সিজনে এসে পৌঁছেছে—আর এইবার গল্পে যোগ হয়েছে ভোটের উত্তাপ, প্রেমের টানাপোড়েন এবং কাঁটা বিছানো রাজনীতি।
গোলাগুলিতে আহত হওয়া প্রধানজি (রঘুবীর যাদব) এখন শারীরিকভাবে সুস্থ, কিন্তু মানসিকভাবে ধাক্কা কাটিয়ে ওঠেননি। অন্যদিকে সচিবজি (জিতেন্দ্র কুমার) জড়িয়ে পড়েছেন কোর্ট-কাছারির জটিলতায়, যার কেন্দ্রে বিধায়কের সঙ্গে তাঁর সংঘাত। এই সময়ই গ্রামে শুরু হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের তোড়জোড়।
মঞ্জুদেবী (নীনা গুপ্তা) ফের প্রার্থী হলেও এবার তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন ক্রান্তি দেবী (সুনীতা রাজওয়ার), বনরাকসের স্ত্রী। ক্রান্তি, ভূষণ ও বনরাকস গোষ্ঠী একজোট হয়ে প্রধানজিদের রীতিমতো চাপে রেখেছে। ওদিকে বিধায়কও প্রকাশ্যে বিরোধীপক্ষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
শুরুতে গল্প কিছুটা ধীর গতিতে এগোলেও ভোট যত ঘনাতে থাকে, ততই স্পষ্ট হয় ফুলেরার রাজনীতির জটিলতা। ছোট ছোট ঘটনার মধ্যে লুকিয়ে থাকে হাসি, চোখের জল ও সমাজের বাস্তব চিত্র। তবে কোথাও কোথাও গল্প যেন বেশি অনুমানযোগ্য, যার ফলে চমক বা নাটকীয়তা কিছুটা কম মনে হতে পারে।
তৃতীয় সিজনে একটু একটু করে সচিবজি ও রিঙ্কির সম্পর্ক গড়ে উঠছিল, তাই দর্শকদের প্রত্যাশা ছিল এবার হয়তো প্রেমটা একটু গাঢ় হবে। কিন্তু সেই দিকটা সিজন ৪-এ কার্যত অব্যবহৃত। ফলে রিঙ্কির উপস্থিতি যেন গল্পের মূল স্রোত থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন।
জিতেন্দ্র কুমার, নীনা গুপ্তা, রঘুবীর যাদব, সুনীতা রাজওয়ার, চন্দন রায়, ফয়সাল মালিক প্রত্যেকেই তাঁদের চরিত্রে অত্যন্ত সাবলীল। তবে ‘বিনোদ’ চরিত্রে অশোক পাঠক একেবারে আলাদা করে নজর কাড়েন। বিশেষ করে শেষ এপিসোডে তাঁর সংলাপহীন অভিব্যক্তি দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
যাঁরা গ্রামের রাজনীতি, চরিত্রের আন্তঃসম্পর্ক আর বাস্তবধর্মী অভিনয় পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে এই সিজন উপভোগ্য হবে। কিন্তু যাঁরা শুধুমাত্র হালকা মেজাজের কমেডি খুঁজছেন, তাঁদের কাছে এই সিজন কিছুটা ধৈর্যের পরীক্ষা।
‘পঞ্চায়েত সিজন ৪’ আগের মতোই আত্মার গন্ধ মাখা, তবে এবার হাসির তুলনায় রাজনীতির ছাপ স্পষ্ট।