“সবসময় পজিটিভই শুনেছি..”- যিশু সেনগুপ্তর চৈতন্য নিয়ে তুলনা, যা বললেন দিব্যজ্যোতি

স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়ার, আর সেই স্বপ্নই যেন বাস্তবের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে দিব্যজ্যোতির জন্য। কারণ, এবার তিনি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের আসন্ন ছবিতে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর চরিত্রে অভিনয় করবেন। বহু বছর বড় পর্দায় কাজ করার পরেও অনেক অভিনেতার কাছে এমন সুযোগ আসে না, অথচ দিব্যজ্যোতির প্রথম সিনেমার সুযোগই এল ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির পরিচালকের হাত ধরে। তবে ছোট পর্দা থেকেই তাঁর অভিনয়ের যাত্রা শুরু, তাই সেই মাধ্যমের প্রতিও তাঁর গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা রয়েছে। ফলে, মেগা সিরিয়ালের ১২ ঘণ্টার শিফট সামলেই এখন বড় পর্দার কাজের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন তিনি।

ছবির ঘোষণার পর থেকেই দিব্যজ্যোতির ওজন কমানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ শুরু হয়েছে। মাত্র ২৮-২৯ দিনে তিনি ৮-১০ কেজি ওজন কমিয়েছেন এবং পরবর্তী দুই মাসে আরও ১৫-১৬ কেজি কমানোর লক্ষ্য নিয়েছেন।

তিনি বলেন, “ওজন কমানোর প্রক্রিয়াটি খুবই কঠিন, কারণ শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরানো সহজ হলেও মাসল বার্ন করা বেশ কঠিন। আমি যখন চওড়া ছিলাম, তখন আমার শরীরে অনেক মাসল ছিল, যা এখন অনেকটাই কমে এসেছে। তবে আরও পরিবর্তন দরকার। ডায়েট ও শরীরচর্চার ধরন সম্পূর্ণ বদলে ফেলতে হয়েছে। ওজন লিফটিং বাদ দিয়ে নতুন ধরনের ব্যায়াম শুরু করেছি। আমার নিউট্রিশন ও পুষ্টিবিদ্যাগত জ্ঞান এখানে অনেক সাহায্য করছে, পাশাপাশি আমার কোচ ও কাছের বন্ধুরাও আমাকে গাইড করছেন।”

দিব্যজ্যোতির মতে, শুধুমাত্র শারীরিক পরিবর্তন নয়, মানসিকভাবেও চরিত্রের গভীরে প্রবেশ করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, “কোনও চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে গবেষণা খুব জরুরি। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর চরিত্র ফুটিয়ে তোলা সহজ কাজ নয়। তাই আমি তাঁকে স্মরণ করছি, তাঁর আশীর্বাদ চাইছি, যাতে এই চরিত্রের প্রতি সুবিচার করতে পারি। শুধু শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন নয়, শরীরিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আনতে হবে।”

এই চরিত্রের জন্য সৃজিত নিজেই তাঁকে ফোন করেছিলেন, যা দিব্যজ্যোতির কাছে স্বপ্নের মতোই লেগেছে।

তিনি বলেন, “যখন সৃজিতদার ফোন পাই, প্রথমে কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তিনি বললেন, ‘আমি সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তোমাকে শ্রী চৈতন্যর চরিত্রের জন্য ভাবছি। তোমার এখন বডি ওয়েট কত? তোমাকে ‘গৌরাঙ্গ’র মতো হয়ে উঠতে হবে।’ সেই মুহূর্তটা আমার কাছে আজও স্বপ্নের মতো লাগে।”

শ্রীচৈতন্যর চরিত্র মানেই অনেকের মনে আসে যিশু সেনগুপ্তের নাম। তুলনা আসতে পারে, তবে তা নিয়ে দিব্যজ্যোতির কোনও চিন্তা নেই।

তিনি বলেন, “যিশুদা আমার খুব প্রিয় অভিনেতা এবং মানুষ হিসেবেও অসাধারণ। তাঁর থেকে অনেক পরামর্শ পেয়েছি, সবসময় ইতিবাচক কথা শুনেছি। তাঁর ‘শ্রী চৈতন্য’ চরিত্র আমি আগেও দেখেছি, এমনকি লকডাউনের সময়ও দেখতাম। কিছু কিছু কাজ কখনও পুরনো হয় না।”

দিব্যজ্যোতি বর্তমানে ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন, ফলে একইসঙ্গে দুই প্রজেক্ট সামলানোর চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমার হাতে এখন দুটি কাজ – ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ এবং ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’। জুন মাস থেকে সিনেমার শুটিং শুরু হবে, তাই সবকিছু ব্যালেন্স করেই এগোতে হবে। আপাতত মেগা শেষ হওয়ার কোনও খবর নেই, ধারাবাহিক ভালোই চলছে।”

এই বড় সুযোগের খবর শুনে পরিবার ও সহকর্মীরা দারুণ খুশি হয়েছেন। তবে সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত ছিল তাঁর সহ-অভিনেতা প্রারব্ধি সিংহের প্রতিক্রিয়া।

তিনি বলেন, “প্রারব্ধি আমার ভাইয়ের মতো। যখন সে খবরটা শুনল, ওর চোখে আনন্দের জল দেখেছিলাম। আমার কাছে ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ ধারাবাহিকটি শুধু একটি কাজ নয়, এটি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান হল প্রারব্ধির মতো ভাই পাওয়া।”

১২ ঘণ্টা মেগায় কাজ করে আবার সিনেমার প্রস্তুতি নেওয়া সহজ নয়, তবে দিব্যজ্যোতি এটি ভালোবেসেই করছেন।

তিনি বলেন, “কোনও কাজ শুরুতে কঠিন লাগে, কিন্তু ধীরে ধীরে সহজ হয়ে যায়। শরীরচর্চার পুরো প্যাটার্ন পাল্টে ফেলতে হয়েছে, পছন্দের খাবার ছাড়তে হচ্ছে, তবে সবটাই চরিত্রের জন্য। এটা একটা বিরাট সুযোগ, তাই আমি নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিতে চাই।”

দিব্যজ্যোতি দত্তের এই যাত্রা শুধুমাত্র তাঁর স্বপ্নপূরণের গল্প নয়, এটি কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও আত্মনিবেদনের এক অনন্য উদাহরণ। এবার দেখার, তিনি ‘গৌরাঙ্গ’ হয়ে কতটা দর্শকদের মন জয় করতে পারেন!

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy