অবশেষে গ্রেফতার হলেন সদ্যপ্রয়াত কলকাতার টিভি সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পল্লবী দে’র প্রেমিক সাগ্নিক চক্রবর্তী।
অভিনেত্রীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার থেকে আটক ছিলেন সাগ্নিক। টানা দুদিন জিজ্ঞাসাবাদের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অভিনেত্রী পল্লবী দে’র ঝুলন্ত মরদেহ প্রথম দেখতে পান তার প্রেমিক সাগ্নিকই। তিনিই পুলিশে খবর দেন। তবে প্রথম থেকেই পল্লবীর মৃত্যুর জন্য প্রেমিক সাগ্নিককে একরকম দায়ী করা হচ্ছিল।
বলা হচ্ছিল, সাগ্নিকের সঙ্গে একাধিক নারীর সম্পর্ক রয়েছে যা মানতে পারেননি পল্লবী। রোববার এ অভিনেত্রীর মরদেহ উদ্ধারের আগে দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটিও হয়।
সাগ্নিকের বিরুদ্ধে খুন ও অর্থ আত্মসাতের মামলা দায়ের করেছেন পল্লবীর বাবা।
সোমবার তিনি অভিযোগ করেন, ঐন্দ্রিলা নামে একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সাগ্নিকের। পল্লবীর অর্থ আত্মসাৎ করার প্ররোচনা দিতেন সাগ্নিকের ঐ বান্ধবী। সাগ্নিক প্রতিদিনই মদ্যপান করতেন আর সেই অবস্থায় পল্লবীকে শারীরিক নির্যাতন করতেন। পল্লবীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছিলেন তার সহকর্মীরা। সাগ্নিকের সঙ্গে ঐন্দ্রিলার সম্পর্ক জানার পর থেকেই সাগ্নিক–পল্লবীর সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। এক পর্যায়ে পল্লবীকে খুন করেছে সাগ্নিক। পল্লবীর টাকাও হাতিয়েছে। তার টাকাতেই কিনেছেন অডি গাড়ি, যাতে চড়ে বেড়াতেন সাগ্নিক। তবে সাগ্নিক খুনী হতে পারেন না বলে দাবি তার প্রাক্তন স্ত্রী সুকন্যার।
তিনি জানান, পল্লবী ভালো ছিল না। আর যাই হোক সাগ্নিক কাউকে খুন করতে পারেন না। পল্লবী ছিলেন তার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একটা সময় তাকে সরিয়েই তার স্বামী সাগ্নিকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েন পল্লবী। এটা দেখে তিনি নিজেই সরে যান।
রোববার পশ্চিমবঙ্গের গড়ফা নামক এলাকার নিজ ফ্ল্যাট থেকে অভিনেত্রী পল্লবীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
অভিনেত্রীর এমন মৃত্যুতে বিস্মিত কলকাতার বাসিন্দারা। কারণ মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও নেটমাধ্যমে সক্রিয় দেখা গেছে পল্লবীকে।
মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে স্টোরিতে একটি ছবি ও দুটি শর্ট রিল শেয়ার করেছিলেন পল্লবী। ছবিতে দেখা যায়, রাস্তার ধারে মোমো খেতে গেছেন তিনি। আর রিল ভিডিওতে দেখা গেছে তার প্রেমিককে।
এদিকে শনিবার ইনস্টাগ্রামে সর্বশেষ পোস্ট দিয়েছিলেন পল্লবী। সেখানে তিনি একটি রিল ভিডিও পোস্ট দেন। শাড়ি আর গহনায় সেজে হাস্যোজ্জ্বল রূপে ভিডিওটি বানান তিনি। এ ছাড়া বন্ধু প্রত্যুষা পালের সঙ্গে দুই বছর আগের একটি মেমোরিও ইনস্টা স্টোরিতে শেয়ার করেন অভিনেত্রী।
এমন হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় ঘরে ফিরে কি করে আত্মহত্যা করতে পারেন কেউ, সেই প্রশ্ন আবারও মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। তাছাড়া পল্লবীর ঘর থেকে কোনো সুইসাইড নোটও উদ্ধার হয়নি।
কলকাতার গড়ফা এলাকার ওই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে কয়েক মাস ধরে প্রেমিকের সঙ্গে বসবাস করছিলেন পল্লবী। এর আগে হাওড়ায় থাকতেন পল্লবী। বিয়ে করেননি পল্লবী, ওই যুবকের সঙ্গে লিভ-ইনে ছিলেন। দুজনের মধ্যে সম্পর্কও ছিল চমৎকার। শনি ও রোববার দুজনের মধ্যে কোনো একটি বিষয় নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়েছিল।
প্রসঙ্গত ‘আমি সিরাজের বেগম’ সিনেমায় লুৎফা’র চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন অভিনেত্রী পল্লবী দে। এ ছাড়া ‘রেশম ঝাঁপি’, ‘কুঞ্জছায়া’ ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছেন। বর্তমানে ‘মন মানে না’ নামে একটি ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছিলেন।