ভারতীয় নীতিনির্ধাকদের কাছে বাজারের বিদ্যমান অস্থিতিশীলতা সমাধানে সক্ষম নীতিমালার নিশ্চয়তা চেয়েছেন শীর্ষ ক্রিপ্টো অ্যাপ ‘কয়েনসুইচ’-এর প্রধান নির্বাহী।
ক্রিপ্টো খাতকে এগিয়ে নিতে, বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দিতে এবং নীতিনির্ধারণী অনিশ্চয়তা সমাধানে ভারতকে পরিষ্কার আইন তৈরির দাবি করেছেন আশিষ সিংহাল।
একদিকে, প্রচলিত আর্থিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি বিবেচনায় ক্রিপ্টো মুদ্রা প্রযুক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ চাইছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অন্যদিকে ক্রিপ্টো খাত থেকে কর ওঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যাকে এই খাতে জাতীয় পর্যায়ের স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
“ব্যবহারকারীরা জানেনও না তাদের বিনিয়োগের কী হবে। সরকার কি নিষিদ্ধ করবে বা করবে না, অথবা কীভাবে এই খাত নিয়ন্ত্রিত হবে?” – ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে রয়টার্সের সঙ্গে আলোচনায় এ প্রশ্ন তুলেছেন সিংহাল। এক সময়ে অ্যামাজনের প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন তিনি।
ভারতের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টো প্রতিষ্ঠান কয়েনসুইচ। প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য ১৯০ কোটি ডলার, ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক কোটি ৮০ লাখ।
ভারতের ক্রিপ্টো মুদ্রা বাজার নিয়ে সিংহালের মত, “আইন শান্তি আনবে… আরও নিশ্চয়তা আনবে।”
ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্রিপ্টো মুদ্রা নিয়ে শঙ্কিত ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু, গত ডিসেম্বরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, গণতন্ত্রের ক্ষমতায়নে এই উদীয়মান প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার হওয়া উচিত, অবমূল্যায়ন করতে নয়।
তহবিল আদান প্রদানের জন্য ভারতীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কাজ করতে প্রায়শই জটিলতার মুখে পড়তে হয় ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জগুলোকে। অন্যদিকে, এপ্রিল মাসে একটি বহুল ব্যবহৃত ও রাষ্ট্রসমর্থিত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রূপি জমা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল কয়েনসুইচসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এতে আরও শঙ্কিত হয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের স্পষ্ট কিছু আইন প্রণয়ন করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সিংহাল। কর আরোপ এবং বিজ্ঞাপনী নীতিমালা কিছুটা সাহায্য করলেও ক্রিপ্টো বাজারের অনেক কিছুই এখনও বেশ ঘোলাটে।
সিংহালের মতে, পরিচয় নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়া, ক্রিপ্টো সম্পদের লেনদেন এবং লেনদেনের অনুসরণের অবকাঠামো প্রয়োজন ভারতের। প্রয়োজনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগও থাকতে হবে আইনে।
ভারতের ক্রিপ্টো বাজারের আকার নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ডেটা না থাকলেও কয়েনসুইচের ধারণা, দেশটিতে ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীর সংখ্যা অন্তত দুই কোটি এবং ছয়শ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে তাদের হাতে।
নীতিনির্ধারণী অনিশ্চয়তায় ভুগছে এই বড় বাজারটি। এপ্রিল মাসেই ভারতে যাত্রা শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ কয়েনবেইজ। কিন্তু কর্মকাণ্ড শুরু করার কয়েক দিনের মাথায় রাষ্ট্রসমর্থিত আন্তঃব্যাংক তহবিল আদান-প্রদান সেবার ব্যবহার স্থগিত করে প্রতিষ্ঠানটি।
ওই ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে মে মাসে কয়েনবেইজ সিইও ব্রায়ান আর্মস্ট্রং জানিয়েছেন, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘অনানুষ্ঠানিক চাপেই’ ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তার প্রতিষ্ঠান।