BigNews: চ্যাংদোলা মন্তব্যে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ, রাজ্য বিধানসভায় পাস হলো প্রস্তাব

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘চ্যাংদোলা’ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক নির্মল ঘোষের আনীত প্রস্তাবটি বিধানসভায় পাস হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শুভেন্দু অধিকারী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তাঁর মন্তব্যের মাধ্যমে সংবিধানের চেতনাকে অবমূল্যায়ন করেছেন। এই মন্তব্যের জেরে রাজ্যের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

প্রস্তাবের মূল বক্তব্য
নির্মল ঘোষের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, শুভেন্দু অধিকারী তাঁর মন্তব্যের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করেছেন, বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, বিধানসভা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং সংবিধানে বর্ণিত সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য সংকল্পবদ্ধ।

শুভেন্দু অধিকারীর বিতর্কিত মন্তব্য
মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘তৃণমূল বাংলার হিন্দু জনগণকে উপড়ে ফেলতে চাইছে। ওদের দলের যে সব মুসলিম বিধায়ক জিতে আসবে, তাদের চ্যাংদোলা করে ১০ মাস পরে এই রাস্তায় ফেলব।’ এই মন্তব্যের পরই রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেতাদের প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দু অধিকারীর নাম না নিয়ে কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানান। অন্যদিকে, তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর শুভেন্দুকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাওয়ার হুমকি দেন। হুমায়ুন বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী যদি মুসলিম বিধায়কদের কাছে ক্ষমা না চান, তাহলে বিধানসভায় তাঁর ঘরের বাইরে গিয়ে বুঝে নেওয়া হবে। আমার নেতৃত্বে ৪২ জন মুসলিম বিধায়কদের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে শুভেন্দুকে।’

তৃণমূল মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীও শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারীর ঠ্যাং ভেঙে দেওয়া হবে।’

বিজেপির পাল্টা প্রতিক্রিয়া
তৃণমূল নেতাদের মন্তব্যের প্রতিবাদে বিজেপি বিধায়করা বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখান। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় হুমায়ুন কবীর ও সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে ওয়াকআউট করে বিজেপি বিধায়করা। বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘তৃণমূল রাজনীতিতে ধর্মের প্রবেশ ঘটিয়েছে। সিপিএম এ রাজ্যে তৃণমূলের বি টিম।’

হুমায়ুন কবীরের অনড় অবস্থান
হুমায়ুন কবীর তাঁর বক্তব্যে অনড় রয়েছেন। তিনি শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ঠুসে দেওয়ার কথা শুনেই ভয় পেয়ে গেছে। যার দম নেই, সে এই কথা বলে কেন? গোটা সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে কেন? সবাইতো এখনও মুখ খোলেনি। আমি একা মুখ খুলেছি।’

রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ
শুভেন্দু অধিকারীর ‘চ্যাংদোলা’ মন্তব্য এবং তৃণমূল নেতাদের ‘ঠুসে দেওয়া’, ‘ঠ্যাং ভেঙে দেওয়া’র মতো মন্তব্যের ফলে বঙ্গ রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই ধরনের ভাষার ব্যবহার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখন দেখার বিষয়, এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়।

সর্বজনীন সংলাপের আহ্বান
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য রাজনৈতিক সংঘাত বাড়িয়ে তোলে। সকল পক্ষকে সংযত ভাষা ব্যবহার করে সর্বজনীন সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে নেওয়া উচিত। সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy