BigNews: পারভেজ মোশাররফ জীবিত, তবে সুস্থ হওয়ার ‘সম্ভাবনা নেই’

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুর খবরটি সম্পূর্ণ গুজব। তিনি এখনো বেঁচে রয়েছেন। তবে প্রাক্তন সামরিক শাসকের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। ভবিষ্যতে তার সুস্থ হয়ে ওঠারও কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। খবর জিও টিভির।

জেনারেল পারভেজ মোশাররফের টুইটার আইডি থেকে দেওয়া পোস্টে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তিনি অসুস্থতার (অ্যামাইলয়েডোসিস) কারণে তিন সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পারভেজ মোশাররফের শারীরিক অবস্থা একটি কঠিন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে আরোগ্যলাভ সম্ভব নয়। তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোও ঠিকমতো কাজ করছে না।

পাকিস্তানের প্রাক্তন সেনাপ্রধানের ‘দৈনন্দিন জীবনযাপনে স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য’ সবার কাছে দোয়া চেয়েছে পরিবার।

তাছাড়া পারভেজ মোশাররফ প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল অল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এপিএমএল) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রাক্তন সামরিক শাসককে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক অথবা তাকে ভেন্টিলেটরে রাখার খবরটি সঠিক নয়।

দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অ্যামাইলয়েডোসিসে আক্রান্ত পারভেজ মোশাররফের চিকিৎসা চলছে। তার অবস্থা স্থিতিশীল।

এর আগে, শুক্রবার (১০ জুন) হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। নাম অনুল্লেখিত পাকিস্তানি সূত্রের বরাতে ভারতের বেশ কিছু গণমাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ হয়। বলা হয়, দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন সামরিক শাসক।

২০১৬ সাল থেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন ৭৮ বছর বয়সী এ নেতা। ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় বেআইনিভাবে সংবিধান বাতিল ও জরুরি অবস্থা জারির দায়ে ২০১৩ সালে মোশাররফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ তাকে অভিযুক্ত করা হয়। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে বিশেষ আদালতের কাছে বিচারের জন্য সব তথ্যপ্রমাণ পেশ করা হয়। তবে আপিল ফোরামে মামলাটি তোলার পর বিচারকাজ দীর্ঘায়িত হয়ে পড়ে এবং মোশাররফ ২০১৬ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তান ছেড়ে চলে যান। চিকিৎসার জন্য তাকে দেশত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

তবে দুবাইয়ে যাওয়ার পর তিনি আর স্বদেশে ফেরেননি। তার কয়েক মাস পরেই পাকিস্তানের একটি বিশেষ আদালত তাকে অপরাধী ঘোষণা করে। বারবার আদালতে হাজির না হওয়ায় পাকিস্তানে থাকা তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। বাতিল হয় তার পাসপোর্ট এবং পরিচয়পত্রও।

রাষ্ট্রদোহের ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ইসলামাবাদের বিশেষ আদালত পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। পাকিস্তানের ইতিহাসে এ ধরনের রায়ের ঘটনা ছিল এটিই প্রথম। তবে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের প্রাক্তনসামরিক শাসকের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেন দেশটির আদালত। যে প্রক্রিয়ায় পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল, তাকে অসাংবিধানিক উল্লেখ দিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়।

নওয়াজ শরিফকে হটিয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা দখল করেন পারভেজ মোশাররফ। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালের নভেম্বরে তিনি পাকিস্তানের সংবিধান বাতিল করে জরুরি অবস্থা জারি করলে এর প্রতিবাদে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। অভিশংসনের ঝুঁকি এড়াতে ২০০৮ সালে পদত্যাগ করেন তিনি।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy