ADB থেকে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পেল ‘ভিখারি’ পাকিস্তান, ভারতের আপত্তি অগ্রাহ্য

ভারতের বারবার আপত্তি এবং উদ্বেগ অগ্রাহ্য করে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (ADB) পাকিস্তানকে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে কূটনৈতিক মহলে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে, কারণ নয়াদিল্লি দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক ঋণ ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে মদদ যোগাচ্ছে। এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন ভারত পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছে এবং তাদের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংকের কাছে দরবার করছে।

সন্ত্রাসের অভিযোগ বনাম ঋণের অনুমোদন:

ভারত বরাবরই অভিযোগ করে এসেছে যে পাকিস্তান সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত ঋণ সামরিক খাতে এবং পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসবাদে ব্যবহার করে। নরেন্দ্র মোদী সরকার এই বিষয়ে ADB সহ একাধিক আন্তর্জাতিক ব্যাংকের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেশ করেছিল, যেখানে পাকিস্তানের আর্থিক অব্যবস্থাপনা এবং জিডিপি কমে যাওয়া সত্ত্বেও সামরিক খাতে ক্রমবর্ধমান বরাদ্দের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সরকারি সূত্র ইন্ডিয়া টুডেকে জানিয়েছে, ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল যে পাকিস্তান যদি ঋণ পায়, তাহলে সেই অর্থ সাধারণ মানুষের উপকারে না লেগে আরও বেশি করে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করবে এবং এর ফলে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অতীতের উদাহরণ টেনে মোদী সরকার এই আশঙ্কার পক্ষে যুক্তিও দেখিয়েছিল।

ADB-র প্যাকেজ এবং IMF-এর পূর্বসূরী:

ADB-র ৮০ কোটি ডলারের এই প্যাকেজের মধ্যে ৩০ কোটি ডলার নীতিভিত্তিক (policy-based) এবং বাকি ৫০ কোটি ডলার প্রোগ্রামভিত্তিক গ্যারান্টি (Program-Based Guarantee বা PBG) হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এই প্রথম নয়, গত মাসেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) পাকিস্তানকে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছিল। সেই সিদ্ধান্তও ভারতের আপত্তির মুখেই কার্যকর হয়েছিল, বিশেষ করে পহেলগাঁও হামলার পর এবং ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের আবহে। IMF থেকে প্রাপ্ত ঋণের প্রথম এবং দ্বিতীয় কিস্তি ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদে পৌঁছে গেছে বলে জানা গেছে।

কূটনৈতিক ব্যর্থতা না আন্তর্জাতিক চাপের সীমাবদ্ধতা?

প্রশ্ন উঠছে, ভারতের এত জোরালো আপত্তি সত্ত্বেও কেন আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলি পাকিস্তানকে ঋণ দিতে আগ্রহী হচ্ছে? এটি কি ভারতের কূটনৈতিক ব্যর্থতা, নাকি আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল সমীকরণে ভারতের প্রভাবের সীমাবদ্ধতা? পর্যবেক্ষকদের মতে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের নিজস্ব কৌশলগত স্বার্থ জড়িত থাকে এবং অনেক সময় মানবিক সাহায্য বা স্থিতিশীলতা বজায় রাখার যুক্তি দেখিয়ে বিতর্কিত দেশগুলিকেও ঋণ দেওয়া হয়। তবে, এই ঘটনা নিশ্চিতভাবে ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দেবে এবং পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে এটিকে আরও শক্তিশালী করবে।

এই ঋণ অনুমোদন নিঃসন্দেহে ভারতের জন্য একটি কূটনৈতিক ধাক্কা। এর ফলে পাকিস্তানের সামরিক ক্ষমতা এবং সন্ত্রাসবাদের প্রতি তাদের সমর্থন আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী দিনে এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy