স্কুলপড়ুয়া থেকে ঘরের লক্ষ্মী— সবার জন্য ব্যান মোবাইল! পঞ্চায়েতের আজব যুক্তিতে তোলপাড় নেটপাড়া

একদিকে মোদী সরকার ২০৪৭ সালের মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’ গড়ার স্বপ্ন দেখছে এবং দেশজুড়ে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার জয়গান চলছে, ঠিক তখনই উল্টো ছবি ধরা পড়ল ভারতেরই এক রাজ্যে। রাজস্থানের জালোর জেলার ১৫টি গ্রামে মহিলাদের জন্য জারি করা হয়েছে এক বিতর্কিত ও আশ্চর্য নিয়ম। আগামী প্রজাতন্ত্র দিবস থেকে এই গ্রামগুলোতে তরুণী এবং বিবাহিত মহিলাদের জন্য স্মার্টফোন বা ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কী এই বিতর্কিত নির্দেশিকা? চৌধরি সম্প্রদায়ের এক সভায় এই কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় মহকুমা সভাপতি সুজনরাম চৌধরী। নতুন নিয়ম অনুযায়ী:

স্মার্টফোন নিষিদ্ধ: তরুণী ও গৃহবধূরা কোনোভাবেই ইন্টারনেট কানেকশন বা ক্যামেরাযুক্ত ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না।

বাইরে ফোন নেওয়া বারণ: সামাজিক অনুষ্ঠান, বিয়েবাড়ি বা ঘরের বাইরে মোবাইল ফোন সঙ্গে নেওয়া যাবে না।

কি-প্যাড ফোনই ভরসা: বাড়ির বউরা চাইলে ঘরের চারদেওয়ালের ভেতর ফোন ব্যবহার করতে পারবেন, তবে তা হতে হবে সাধারণ কি-প্যাডযুক্ত ফোন— যাতে কোনো ক্যামেরা বা ইন্টারনেটের সুবিধা থাকবে না।

স্কুলপড়ুয়াদের জন্য কড়াকড়ি: ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার জন্য মোবাইল ব্যবহার করলেও তা শুধুমাত্র ঘরের ভেতরেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

অদ্ভুত যুক্তিতে সরব পঞ্চায়েত কেন হঠাৎ এমন মধ্যযুগীয় ফতোয়া? মহকুমা সভাপতি সুজনরাম চৌধরীর দাবি, অনেক মহিলা নিজের কাজের সুবিধার জন্য শিশুদের হাতে মোবাইল তুলে দেন। এতে শিশুদের চোখের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং তারা মোবাইলে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। শিশুদের এই আসক্তি থেকে দূরে রাখতেই নাকি এই পদক্ষেপ!

মহিলাদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তবে এই আজব যুক্তিতে সন্তুষ্ট নয় সাধারণ মানুষ। প্রশ্ন উঠেছে, যদি শিশুদের সুরক্ষাই আসল উদ্দেশ্য হয়, তবে নিয়মটি শুধুমাত্র মহিলাদের জন্যই কেন? পুরুষদের ক্ষেত্রে কেন কোনো বিধিনিষেধ নেই? বর্তমান যুগে যখন ব্যাঙ্কিং থেকে শুরু করে জরুরি পরিষেবা— সবকিছুই মোবাইলের ওপর নির্ভরশীল, তখন মহিলাদের এই প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত করা তাদের পিছিয়ে দেওয়ার নামান্তর বলেই মনে করছেন সমাজকর্মীরা। রাজস্থানের এই ‘অদ্ভুত’ নিয়ম নিয়ে ইতিমধ্য়েই দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে।