অফিস থেকে আধিকারিকের গাড়ি, সব থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে! নজিরবিহীন নিরাপত্তার মোড়কে বাংলার সিইও

এতকাল যে দফতরের নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলে এসেছে কলকাতা পুলিশ, এখন সেখানেই প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের হাতে। কলকাতার ফেয়ারলি প্লেসে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (CEO) দফতরে শুক্রবার সকাল থেকেই মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আধিকারিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের এই কড়া পদক্ষেপ রাজ্য প্রশাসনের ওপর ‘অনাস্থা’ কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

কেন এই হঠাৎ পরিবর্তন? ঘটনার সূত্রপাত গত ২৪ নভেম্বর। ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ (SIR) চলাকালীন একাধিক অভিযোগ নিয়ে সিইও দফতরে ডেপুটেশন দিতে আসেন বিএলও (BLO)-রা। অভিযোগ, সেদিন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ কুমার আগরওয়াল ব্যস্ত থাকায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে না পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি চরমে ওঠে যখন বিএলও-রা সারারাত দফতরের তিনতলায় অবস্থান বিক্ষোভ চালান।

কমিশনের চিঠিতে চাঞ্চল্য: সেই ঘটনার পর থেকেই নির্বাচনী আধিকারিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ বর্মাকে চিঠি দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থার কথা বলা হলেও, কমিশন শেষ পর্যন্ত দিল্লির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ওপরই ভরসা রাখল। বৃহস্পতিবার রাতেই নির্দেশ আসে যে, সিইও দফতরের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে আধিকারিকদের বসার ঘর— সর্বত্র পাহারায় থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী।

বডিগার্ড হিসেবেও কেন্দ্রীয় বাহিনী: নতুন নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র দফতর নয়, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক বা উচ্চপদস্থ কর্তারা যখনই বাইরে বেরোবেন, তাঁদের গাড়ির সঙ্গেও ছায়ার মতো থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। এমনকি খুব শীঘ্রই সিইও দফতর যখন শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া ভবনে স্থানান্তরিত হবে, সেখানেও নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতেই।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: রাজ্যের পুলিশের বদলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর এই বাড়তি নির্ভরতাকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। একদিকে বিএলও-দের আন্দোলন এখনও মঞ্চ করে চলছে, অন্যদিকে সামনেই লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি। এই ডামাডোলের মাঝে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এই প্রবেশ রাজ্য-কমিশন সংঘাতকে আরও উসকে দিল বলেই মনে করা হচ্ছে।