উর্দির নিচে দরদী মন! শীতের রাতে ভবঘুরেদের সহায় হতে ডানলপে ‘মানবতার দেওয়াল’ গড়লেন পুলিশকর্মী

হাড়কাঁপানো শীতে যখন সাধারণ মানুষ লেপ-কম্বলের নিচে আরাম খুঁজছেন, তখন রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটানো ভবঘুরেদের লড়াইটা অন্যরকম। সেই অসহায় মুখগুলোর কষ্ট লাঘব করতে এবার খাকি উর্দির আড়াল থেকে বেরিয়ে এল এক মানবিক সত্তা। ডানলপ-বরানগর মেট্রো স্টেশনের কাছে ‘মানবতার দেওয়াল’ গড়ে নজর কেড়েছেন পুলিশকর্মী বাপন দাস।

কী এই ‘মানবতার দেওয়াল’? বাপন দাসের উদ্যোগে মেট্রো সংলগ্ন একটি দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে সোয়েটার, জ্যাকেট এবং কম্বল। তাঁর এই উদ্যোগের মূল মন্ত্র— “আপনার যা প্রয়োজন নেই এখানে দিয়ে যান, যার প্রয়োজন সে এখান থেকে নিয়ে যাক।” সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এখান থেকে পছন্দমতো শীতবস্ত্র বেছে নিচ্ছেন ফুটপাতবাসী ও দুঃস্থ মানুষেরা। এমনকি শিশুদের জন্য আলাদা ছোটদের শীতের পোশাকও রাখা হয়েছে এই দেওয়ালে।

উদ্যোগের নেপথ্য কারণ: ডিউটি করতে গিয়ে প্রতিদিন তিনি দেখতেন, স্টেশনের ধারে বা ফুটপাতে অসংখ্য মানুষ কাপড়ের অভাবে থরথর করে কাঁপছেন। সেই করুণ দৃশ্য দেখেই নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি বাপন। নিজের উদ্যোগেই শুরু করেন শীতবস্ত্র সংগ্রহ। বর্তমানে তাঁর এই ভাবনা জনজোয়ারে পরিণত হয়েছে। অনেক সাধারণ মানুষও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁদের অতিরিক্ত পোশাক এই দেওয়ালে রেখে যাচ্ছেন।

সমাজের প্রতি আবেদন: পুলিশকর্মী বাপন দাসের কথায়, “সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে আমার আবেদন, আপনাদের বাড়িতে যে সব পোশাক পড়ে আছে বা ব্যবহার করছেন না, তা একবার এখানে দিয়ে যান। আপনার ফেলে দেওয়া পোশাকেই হয়তো বেঁচে যাবে অন্য কারোর প্রাণ।”

প্রশংসায় পঞ্চমুখ শহরবাসী: পুলিশের কাজ নিয়ে যেখানে মাঝেমধ্যেই বিতর্ক দানা বাঁধে, সেখানে বাপন দাসের এই সংবেদনশীল কাজ সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশের এক নতুন রূপ তুলে ধরেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “শীতের শহরে এই দেওয়াল যেন শুধু সিমেন্টের নয়, বরং উষ্ণ পরশ ও সহানুভূতির প্রতীক।”

ইতিমধ্যেই এই মানবতার দেওয়ালের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, যা দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন আরও অনেকেই।