বদলে যাচ্ছে লালমাটির গ্রাম! ১৮৬টি স্কুল, ৫ হাজার পড়ুয়া— বাঁকুড়ায় বিপ্লব আনছেন নারীরা!

সকালের নরম রোদ গায়ে মেখে ধুলো ওড়ানো কাঁচা রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে একদল কচিকাঁচা। কারও কাঁধে পুরনো ব্যাগ, কারও পা জোড়া খালি— কিন্তু প্রত্যেকের চোখেমুখে নতুন কিছু শেখার অদম্য জেদ। কোনো নামী শহরের নামী স্কুল নয়, এই দৃশ্য এখন বাঁকুড়া জেলার ১৮৬টি প্রত্যন্ত গ্রামের। যেখানে নিঃশব্দে ঘটে চলেছে এক বিশাল শিক্ষা বিপ্লব।
নারীদের হাত ধরেই ছড়াচ্ছে শিক্ষার আলো এই কর্মযজ্ঞের সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর পরিচালনা। বাঁকুড়ার ১৮৬টি স্কুলের প্রতিটির দায়িত্বে রয়েছেন একজন করে স্থানীয় মহিলা। এর ফলে একদিকে যেমন ৫ হাজার শিশু বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে, তেমনই ১৮৬ জন গ্রামীণ মহিলার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে। প্রতিদিন সকালে অফলাইন ক্লাসে চলছে পড়া, লেখা আর অঙ্ক কষার পাঠ। কেবল পুঁথিগত বিদ্যা নয়, শিশুদের জীবনবোধের শিক্ষাও দিচ্ছেন এই দিদিমণিরা।
ডিজিটাল দুনিয়ায় পা: ফ্রিতে স্পোকেন ইংলিশ যুগ বদলেছে, তাই শিক্ষার ধরণও পাল্টেছে। অফলাইন ক্লাসের পাশাপাশি এই উদ্যোগকে ডিজিটাল-ফ্রেন্ডলি করে তুলতে শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস। বর্তমানে প্রায় ৫০ জন শিশু মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখে শিখছে স্পোকেন ইংলিশ। এমনকি বড়দের জন্য রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। গ্রামের প্রান্তিক শিশুটিও যাতে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, সেটাই লক্ষ্য এই প্রকল্পের।
শুধু পড়াশোনা নয়, মিলছে চাকরির হদিশ ‘আর্ট অফ লিভিং’-এর এই মহতী উদ্যোগ কেবল স্কুলেই সীমাবদ্ধ নেই। বাঁকুড়ার প্রায় ৩০০টি গ্রামকে নিয়ে শুরু হয়েছে এক নতুন দিশা। সেখানে যুবকদের দেওয়া হচ্ছে সিকিউরিটি গার্ডের প্রশিক্ষণ। শুধু ট্রেনিং দিয়েই দায় ঝেড়ে ফেলা নয়, প্রশিক্ষণ শেষে সরাসরি নামী সংস্থায় চাকরির ব্যবস্থাও করে দেওয়া হচ্ছে। ছাতনা থেকে সিমলাপাল— জেলার কোণায় কোণায় ছড়িয়ে পড়ছে এই সেবার কাজ।
এই প্রকল্পের এক কো-অর্ডিনেটর জানান, “এখানে কোনো লাভ-ক্ষতির হিসেব নেই। পুরোটাই মানুষের জন্য সেবা। আমরা চাই গ্রামের মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াক।” কোনো বড় দালান বা এসি ঘর নেই, মাটির ঘরের এই ছোট ছোট পাঠশালাই এখন বাঁকুড়ার আগামীর ভাগ্য বদলাচ্ছে।