বাণিজ্য পথে সওদাগরদের বিলাসবহুল আস্তানা! হরপ্পার ধ্বংসাবশেষে লুকিয়ে কোন রহস্য? গবেষকদের তথ্যে শোরগোল

হরপ্পা সভ্যতা কতটা উন্নত ছিল, তার প্রমাণ বারেবারে পেয়েছে বিশ্ব। তবে এবার যা সামনে এল, তা আধুনিক স্থাপত্যবিদ্যাকেও হার মানাবে। আজ থেকে প্রায় ৪ হাজার বছর আগে ব্রোঞ্জ যুগেও যে হাইওয়ের ধারে ‘ধাবা’ বা ‘পান্থশালা’র অস্তিত্ব ছিল, তার অকাট্য প্রমাণ পেলেন গবেষকরা। পুনের ডেকান কলেজের একদল গবেষক ও আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (ASI) যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে এই বিস্ময়কর তথ্য।

৪ হাজার বছরের পুরনো ‘হাইওয়ে হোটেল’ গুজরাটের কচ্ছের কোটাডা ভাডলি নামক জায়গায় প্রায় ১৫ বছর আগে কিছু ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল। সম্প্রতি আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, এটি কোনো বসতবাড়ি ছিল না। বরং এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত পান্থশালা। মূলত কচ্ছের ওপর দিয়ে যে সওদাগররা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে দূরে যাত্রা করতেন, তাঁদের ক্লান্তি মেটাতেই তৈরি হয়েছিল এই বিশেষ আবাসন।

কী কী সুবিধা ছিল সেই পান্থশালায়? ফরাসি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই পান্থশালাটি ছিল বর্তমান যুগের হাইওয়ে ধাবাগুলোর মতোই অত্যাধুনিক:

থাকার জায়গা: ক্লান্ত বণিকদের জন্য ছিল নিরাপদ বিশ্রামের ঘর।

খাবার ব্যবস্থা: দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্য খাবারের বন্দোবস্ত থাকত এখানে।

পশুদের আস্তাবল: বণিকদের সঙ্গে থাকা উট বা ঘোড়া রাখার জন্য ছিল আলাদা ব্যবস্থা।

গবেষকদের নজর কেড়েছে যা সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, এই ধ্বংসাবশেষের আশপাশে কোনো বড় জনবসতি বা অন্য কোনো বাড়ির চিহ্ন মেলেনি। মাইলের পর মাইল ফাঁকা রাস্তার মাঝে এটিই ছিল একমাত্র আশ্রয়স্থল। ঠিক যেমন আজকের দিনে নির্জন হাইওয়ের ধারে ধাবা বা মোচেল দেখা যায়। হরপ্পার মানুষের এই উন্নত বাণিজ্যিক চিন্তাভাবনা দেখে রীতিমতো চমকে গিয়েছেন আধুনিক ইতিহাসবিদরা।

এই আবিষ্কার প্রমাণ করে দিল যে, আজ থেকে চার সহস্রাব্দ আগেও ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ বাণিজ্য এবং পর্যটনের প্রসারে কতটা পেশাদার ও দূরদর্শী ছিলেন।