আগুনে পুড়ছে শিশুদের বিদ্যালয়, ভাঙচুর ৩২ ধানমন্ডিতে! বাংলাদেশে কি এবার ইতিহাস মুছে ফেলার চূড়ান্ত লড়াই?

ইতিহাস মোছার এক ভয়ংকর খেলায় মেতেছে ‘নতুন’ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি যেখানে জড়িয়ে, সেই ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িটি এখন কেবল এক ধ্বংসস্তূপ। কিন্তু সেই ধ্বংসস্তূপের ওপরও ফের আছড়ে পড়ল উন্মত্ত জনতার আক্রোশ। ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর আসার পর থেকেই বৃহস্পতিবার রাতভর তাণ্ডব চলল ধানমন্ডি এলাকায়।

ধ্বংসস্তূপে এক্সক্যাভেটর দিয়ে তাণ্ডব গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিনই ধানমন্ডির এই ঐতিহাসিক বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। লুটতরাজ চালানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর আসবাবপত্র থেকে শুরু করে যাবতীয় স্মারক। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে হাদির মৃত্যু সংবাদ ছড়াতেই একদল উগ্রপন্থী জনতা ফের সেখানে হামলা চালায়। অভিযোগ উঠেছে, দাঁড়িয়ে থাকা দেওয়ালগুলোও গুঁড়িয়ে দিতে এবার এক্সক্যাভেটর ও বুলডোজার ব্যবহার করা হয়েছে।

টার্গেট শিশুদের স্কুল ‘ছায়ানট’ জনতার রোষ থেকে বাদ পড়েনি ঐতিহ্যবাহী ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনও। শিশুদের বিদ্যালয় এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত এই ভবনে হামলাকারীরা ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এরপর ভবনের চার ও পাঁচ তলায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও দমকল বাহিনী দ্রুত এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে, কিন্তু ততক্ষণে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে বহু মূল্যবান সম্পদ।

ইতিহাস বনাম উন্মাদনা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, জামাত সমর্থক ও কট্টরপন্থীদের একাংশ চাইছে বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম চিরতরে মুছে ফেলতে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে ফাঁসির সাজা দেওয়ার পর থেকেই এই আক্রোশ আরও বেড়েছে। যে নেতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, আজ তাঁর স্মৃতির ওপরেই একের পর এক আঘাত আসছে।

থমথমে রাজধানী ঢাকা ধানমন্ডির পাশাপাশি ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অফিসেও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও হাদির মৃত্যু ঘিরে গড়ে ওঠা এই জনরোষ নিয়ন্ত্রণ করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউনূস সরকারের কাছে।