উল্কার গতিতে উত্থান, চিরঘুমে বিরাম! কে এই শরিফ ওসমান হাদি? যাঁর মৃত্যুতে জ্বলছে গোটা বাংলাদেশ

কেউ তাঁকে চিনত না। জুলাইয়ের সেই উত্তাল দিনগুলোতে সাধারণ এক শিক্ষকের মুখ হঠাৎই হয়ে উঠেছিল প্রতিবাদের ভাষা। শেখ হাসিনা সরকারের পতন থেকে শুরু করে আওয়ামী লিগ নিষিদ্ধ করার দাবি—সবখানেই অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। কিন্তু গল্পের শেষটা হল রক্তক্ষয়ী ট্র্যাজেডিতে। সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে লড়াই শেষে চিরবিদায় নিলেন শরিফ ওসমান হাদি (Osman Bin Hadi)।

সাধারণ থেকে অসাধারণ: হাদির জীবনগাথা ১৯৯৩ সালের ৩০ জুন বরিশালের এক সাধারণ পরিবারে জন্ম হাদির। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট হাদি ছিলেন মেধাবী। নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক পাঠ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন। পেশায় ছিলেন একজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান তাঁর জীবনকে আমূল বদলে দেয়। ঢাকার রামপুরা এলাকার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই তিনি হয়ে ওঠেন আন্দোলনের অন্যতম সেনাপতি।

ইনকিলাব মঞ্চ ও রাজনীতির ময়দান হাসিনা সরকারের পতনের পর হাদির উদ্যোগেই তৈরি হয় ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ‘জুলাই চার্টার’ ঘোষণার দাবিতে তাঁর তেজস্বী ভাষণ তাঁকে রাতারাতি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যায়। ৩২ ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবন ভাঙচুরের ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়ে বিতর্কও কম হয়নি। তবে সব বিতর্ককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঢাকা-৮ আসন থেকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা করেছিলেন তিনি।

‘চা-সিঙ্গারা’ আড্ডা থেকে শেষযাত্রা নির্বাচনী প্রচারের অভিনব কায়দা ছিল তাঁর—’চা-সিঙ্গারা আড্ডা’। কিন্তু হাদির এই পথচলা অনেকেরই চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিল। হাদি নিজেই জানিয়েছিলেন, তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শেষমেশ ১২ ডিসেম্বর জুম্মার নামাজের পর বিজয়নগরে দুষ্কৃতীদের গুলির নিশানা হন তিনি। মাথায় গুলি লাগা অবস্থায় তাঁকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হলেও, শুক্রবার রাতে জীবনযুদ্ধে হার মানেন তিনি।

আগুনে পুড়ছে ওপার বাংলা হাদির মৃত্যুর খবর আসার পর থেকেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। শাহবাগে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত, সংবাদপত্রের অফিসে আগুন এবং ভারতীয় দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ—সব মিলিয়ে এক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আজ হাদির নিথর দেহ বাংলাদেশে আনা হবে, যা ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।

শরিফ ওসমান হাদি আজ কেবল একটি নাম নয়, ওপার বাংলার বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার এক জলজ্যন্ত প্রতীক হয়ে রইলেন।