রণক্ষেত্র বাংলাদেশ! হাদি প্রয়াণে উত্তাল শাহবাগ, ভারতীয় হাই কমিশনে পাথরবৃষ্টি-সংবাদপত্রের অফিসে আগুন।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল বাংলাদেশ। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী থেকে খুলনা—সর্বত্রই আছড়ে পড়েছে জনরোষ। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এই তাণ্ডবে আক্রান্ত হয়েছে ভারতীয় কূটনৈতিক মিশন এবং প্রথম সারির দুটি সংবাদমাধ্যম। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে রাজশাহী ও খুলনায় ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (IVAC) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি।
ভারতীয় দূতাবাসে হামলা ও বিক্ষোভ বাংলাদেশে ক্রমাগত বাড়তে থাকা ভারত-বিরোধী আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটল বৃহস্পতিবার রাতে। চট্টগ্রামের ভারতীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনের বাইরে কয়েকশো বিক্ষোভকারী মশাল জ্বালিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। অন্যদিকে, রাজশাহীতে বিক্ষোভকারীরা হাই কমিশন ঘেরাওয়ের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও পাথরবৃষ্টির ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তার খাতিরেই ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রগুলি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে দিল্লির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে তলব করে কূটনৈতিক মিশনের সুরক্ষা নিয়ে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছিল।
সংবাদপত্রের অফিসে অগ্নিসংযোগ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দুই সংবাদমাধ্যম—’প্রথম আলো’ এবং ‘দ্য ডেইলি স্টার’। ঢাকার কারওয়ান বাজারে অবস্থিত এই দুই অফিসের ভবনে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় উন্মত্ত জনতা। আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়ায় ভেতরে বহু সাংবাদিক আটকে পড়েন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, এই সংবাদমাধ্যমগুলি ‘ভারতীয় স্বার্থ’ রক্ষা করছে।
শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস হাদিকে ‘শহিদ’ আখ্যা দিয়ে শনিবার সারা দেশে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। ওইদিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। ইউনূস সরকারের অভিযোগ, ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্রলিগ’-এর এক কর্মী হাদির মাথায় গুলি করেছে।
কে এই ওসমান হাদি? মাদ্রাসার শিক্ষক বাবার সন্তান হাদি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। জুলাইয়ের গণআন্দোলনে হাসিনা-বিরোধী স্লোগান তুলে নজরে আসেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বিরোধী এবং ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের’ বিরুদ্ধে সরব হয়ে তিনি ইনকিলাব মঞ্চের প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন। আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে তাঁর লড়ার কথা ছিল। ১২ ডিসেম্বর গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়।
ভোটের আগে হাদির এই রহস্যময় মৃত্যু এবং তৎপরবর্তী ভারত-বিরোধী উত্তাপ বাংলাদেশের আগামী রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও জটিল করে তুলল।