‘খুনিরা রেহাই পাবে না’, হাদি হত্যাকাণ্ডে জাতির উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা ইউনূসের! প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার অফিসে ভাঙচুর

৬ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হার মানলেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি। বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তাঁর প্রয়াণের খবর নিশ্চিত হতেই নজিরবিহীন অস্থিরতা শুরু হয়েছে ওপার বাংলায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বৃহস্পতিবার রাতেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

জাতির উদ্দেশ্যে ড. ইউনূসের শোকাতুর বার্তা টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে ড. ইউনূস অত্যন্ত ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেন, “জুলাই বিদ্রোহের নির্ভীক সম্মুখ যোদ্ধা হাদি আর আমাদের মধ্যে নেই। এটি দেশের গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের এক অপূরণীয় ক্ষতি।”

শোক দিবস: হাদির সম্মানে আগামী শনিবার বাংলাদেশে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। সেদিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

বিশেষ প্রার্থনা: শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর দেশজুড়ে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হবে।

পরিবারের দায়িত্ব: শহিদ হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের সমস্ত দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বিক্ষোভে জ্বলছে ঢাকা: আক্রান্ত সংবাদমাধ্যম হাদির মৃত্যুর খবর রাষ্ট্র হতেই ঢাকার শাহবাগ মোড়ে আছড়ে পড়ে জনরোষ। ‘তুমি কে আমি কে—হাদি, হাদি’ স্লোগানে উত্তাল হয় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। বিক্ষোভকারীদের একটি দল কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ এবং ‘ডেইলি স্টার’-এর অফিসে হামলা চালায়। ভবনের সামনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে কুশপুতুল দাহ করে ‘জাতীয় ছাত্রশক্তি’।

হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও ভারতের যোগসূত্র গত শুক্রবার বিজয়নগরে নির্বাচনী প্রচারের সময় মুখোশধারী বন্দুকধারীদের গুলিতে বিদ্ধ হয়েছিলেন হাদি। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদের পরিবারকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ইনকিলাব মঞ্চের হুঁশিয়ারি, যদি খুনিরা ভারতে পালিয়ে গিয়ে থাকে, তবে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত তাদের ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ড. ইউনূস দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “হুমকি বা রক্তপাত ঘটিয়ে কেউ বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে থামাতে পারবে না। কোনো গুজবে কান দেবেন না, আইনকে নিজের হাতে তুলে নেবেন না।”

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন। তার আগে হাদির এই প্রয়াণ বাংলাদেশের রাজনীতির মোড় কোন দিকে ঘোরায়, এখন সেটাই দেখার।