ফেলে দেওয়া জিনিসই এখন অমূল্য সম্পদ! দুর্গাপুরের অর্পিতার তুলির টানে প্রাণ পাচ্ছে কাশফুল আর জবা।

ড্রয়িং খাতা বা ক্যানভাস নয়, তাঁর কাছে আস্ত প্রকৃতিই একটা রঙীন ক্যানভাস। কখনো তালের আঁটির ওপর ফুটে উঠছে কবিগুরুর মুখাবয়ব, কখনো আবার জীবন্ত কচুপাতা বা জবা ফুলের পাপড়িতে জ্যান্ত হয়ে উঠছে দেবদেবীর প্রতিমা। দুর্গাপুরের আইটিআই পড়ুয়া অর্পিতা সমাদ্দারের এই অভাবনীয় শিল্পসত্ত্বা দেখে এখন তাজ্জব গোটা দেশ।

অকেজো জিনিসেই প্রাণের স্পন্দন: অর্পিতার বিশেষত্ব হলো তিনি অব্যবহৃত বা ফেলে দেওয়া জিনিসের ওপর ছবি আঁকতে পছন্দ করেন। তাঁর হাতের জাদুতে:

তালের আঁটির ওপর ফুটে উঠেছে প্রেমানন্দ মহারাজ ও লোকনাথ বাবার ছবি।

কাশফুলের ওপর তিনি গড়ে তুলেছেন দুর্গা প্রতিমার অনন্য রূপ।

গাছের পাতা, আম বা পদ্মপাতার ওপর অনায়াসেই তাঁর তুলি ফুটিয়ে তোলে পেন্সিল স্কেচ বা চারকোল আর্ট।

স্বশিক্ষিত শিল্পী অর্পিতা: বাঁকুড়ার বড়জোড়ার শ্রীপল্লী কলোনির বাসিন্দা অর্পিতার বাবা অসীমবাবু পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান। ছোটবেলায় আঁকার স্কুলে ভর্তি হলেও গতানুগতিক শিক্ষা তাঁর মনে ধরেনি। অর্পিতা আজ যা তৈরি করছেন, তার সিংহভাগই ইউটিউব আর সোশ্যাল মিডিয়া দেখে নিজের চেষ্টায় শেখা। ক্লে আর্ট থেকে চারকোল— সব বিভাগেই তিনি সিদ্ধহস্ত।

পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজসেবা: অর্পিতা শুধু নিজে আঁকেন না, দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট আইটিআই-এর মেধাবী এই ছাত্রীর কাছে বর্তমানে এলাকার প্রায় ৪০ জন খুদে পড়ুয়া আঁকা শিখছে। দুর্গাপুর এবং বড়জোড়া দুই কলেজেই তিনি তাঁর সৃজনশীলতার জন্য শিক্ষক ও সহপাঠীদের নয়নমণি।

অর্পিতার এই প্রতিভা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, শিল্পী হওয়ার জন্য দামী সরঞ্জামের চেয়েও বড় প্রয়োজন শিল্পীমনের আর একাগ্রতার। প্রকৃতির কোল থেকে কুড়িয়ে আনা উপকরণ দিয়েই তিনি আজ কোটি মানুষের মন জয় করে নিচ্ছেন।