গোয়ালঘর আর পার্টি অফিসে শৈশব! কাটোয়ায় অঙ্গনওয়াড়ির করুণ দশা, খোলা আকাশের নিচে রান্না হচ্ছে শিশুদের খাবার।

শিশুদের শিক্ষার হাতেখড়ি হওয়ার কথা যেখানে, সেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলোরই এখন নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া-১ ব্লকে অঙ্গনওয়াড়ি পরিষেবা আজ কার্যত শিকেয়। নিজস্ব পাকা ভবন না থাকায় কোথাও গোয়ালঘরে, আবার কোথাও রাজনৈতিক দলের পার্টি অফিসে চলছে শিশুদের পঠনপাঠন ও রান্নার কাজ।
আঁতকে ওঠার মতো পরিসংখ্যান: সরকারি সূত্র বলছে, কাটোয়া-১ ব্লকে মোট ২৮৮টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থাকলেও নিজস্ব পাকা বাড়ি আছে মাত্র ৭১টির। বাকি ২১৭টি কেন্দ্রই চলছে পরগাছার মতো। কারও বাড়ির উঠোন, ক্লাবঘর কিংবা ঠাকুরমণ্ডপই এখন শিশুদের ‘স্কুল’। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, আলমপুর গ্রামের ৪৪ নম্বর কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে একটি সিপিএম পার্টি অফিসে!
কলাতলায় রান্না, ঝুঁকির মুখে স্বাস্থ্য: শুধু পড়াশোনা নয়, শিশুদের পুষ্টিকর খাবার তৈরির পরিবেশ নিয়েও উঠছে বড় প্রশ্ন।
অনেক জায়গায় রাস্তার ধারে বা কলাতলায় অস্থায়ী ছাউনির নিচে চলছে রান্না।
বর্ষাকালে জল-কাদার মধ্যেই কর্মীরা বাধ্য হচ্ছেন প্রসূতি ও শিশুদের খাবার তৈরি করতে।
নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না হওয়ায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগের ঝুঁকি।
ভুক্তভোগীদের আর্তনাদ: সহায়িকা রীতা রুদ্রের আক্ষেপ, “পার্টি অফিসের এক কোণে কোনোমতে রান্না করতে হয়। বর্ষায় ভিজে একসা হতে হয় আমাদের। এই সমস্যার সমাধান কবে হবে কেউ জানে না।” স্থানীয় অভিভাবকদের প্রশ্ন, ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগেও কেন শিশুদের জন্য একটা নিরাপদ ছাদ তৈরি করতে পারছে না প্রশাসন?
প্রশাসনের সাফাই: জায়গার অভাবেই নাকি থমকে আছে ভবন নির্মাণ— এমনটাই দাবি কাটোয়া-১ ব্লকের সিডিপিও দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি জানান, “বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকারি ফাইলের লাল ফিতের প্যাঁচে আর কতদিন রাস্তার ধারে বসে পুষ্টির পাঠ নেবে আগামীর ভবিষ্যৎ?