‘উড়ালপুল দিয়ে ঘোরান নয়তো পুলিশ ডাকব’ -মহিলা যাত্রীদের হুমকিতে তটস্থ বাইক চালকরা!

রাতের কলকাতায় যখন বাস-অটো উধাও হয়ে যায়, তখন সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা অ্যাপ-নির্ভর বাইক-ট্যাক্সি। কিন্তু এবার সেই পরিষেবা ঘিরেই ঘনিয়ে এল কালো মেঘ। একের পর এক শ্লীলতাহানির ‘ভুয়ো’ অভিযোগ, যাত্রীদের দুর্ব্যবহার এবং ছিনতাইয়ের ঘটনায় আতঙ্কিত চালকরা এবার রাতের পরিষেবা বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন।

ঘটনা ১: উল্টো বিপত্তি ফুলবাগানে সম্প্রতি মানি স্কোয়ার থেকে বেলেঘাটা যাওয়ার জন্য এক মহিলা যাত্রী বাইক বুক করেন। মাঝপথে আচমকাই তিনি ড্রপ লোকেশন বদলানোর দাবি জানান। চালক রাজি না হওয়ায় চলন্ত বাইক থেকে নামার চেষ্টা করেন তিনি এবং পরিচিতদের ফোন করে চালকের নামে অভব্য আচরণের নালিশ করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে চালক নিজেই ট্রাফিক গার্ডের সাহায্য নিলেও, শেষ পর্যন্ত মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে ফুলবাগান থানা ওই চালককেই গ্রেফতার করে। মাঝরাতে জামিন নিয়ে মুক্তি পান ওই যুবক।

ঘটনা ২: নাবালকদের হাতে প্রাণসংশয় গত সেপ্টেম্বর মাসে সোনারপুরে দুই নাবালক যাত্রী সেজে বাইক চালককে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে মোবাইল ছিনতাই করে। শুধু তাই নয়, নিমতলা ঘাট এলাকাতেও এক যাত্রীকে নামাতে গিয়ে আক্রান্ত হন এক চালক। যাত্রী নিজেই দলবল নিয়ে এসে মারধর ও ছিনতাই চালায় বলে অভিযোগ।

চালকদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা: সিটু (CITU) অনুমোদিত চালক ইউনিয়নের দাবি, অনেক ক্ষেত্রে মহিলা যাত্রীরা বাইকে উঠে শহর ঘোরার বায়না ধরছেন। কেউ বলছেন, “উড়ালপুল দিয়ে ঘুরে বাড়ি যাব, টাকা দিয়ে দেব।” চালক রাজি না হলেই আসছে পুলিশে দেওয়ার হুমকি। নিরাপত্তাহীনতার কারণে কলকাতায় রাতের বাইকের সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে কমে মাত্র ১০ হাজারে এসে ঠেকেছে।

পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ: ‘ওলা-উবের অপারেটার্স অ্যান্ড ড্রাইভার্স ইউনিয়ন’-এর সহ-সম্পাদক সোহাগ খান বলেন, “আমরা আতঙ্কে ভুগছি। বাইক চালক মানেই সে খারাপ—এই মানসিকতা বদলাতে হবে। পুলিশি টহল না বাড়লে এবং চালকদের নিরাপত্তা না দিলে রাতের কলকাতা অচল হয়ে পড়বে।”

শহরের গণপরিবহনের এই সংকটে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি কোথায় গিয়ে ঠেকে, এখন সেটাই দেখার।