মেসি-কাণ্ডে তোলপাড় নবান্ন! তিন শীর্ষকর্তার শোকজ রিপোর্ট জমা, কার ঘাড়ে দোষ চাপালেন ক্রীড়া সচিব?

গত ১৩ ডিসেম্বর তিলোত্তমায় রাজপুত্র লিওনেল মেসির পা রাখা নিয়ে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত এক চরম প্রশাসনিক ব্যর্থতার কালিমায় লিপ্ত হল। যুবভারতী স্টেডিয়ামে মেসির অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিয়ে গাফিলতির অভিযোগে এবার তদন্ত কমিটির কাছে নিজেদের বয়ান জমা দিলেন রাজ্যের তিন শীর্ষকর্তা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম কুমার রায়ের তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার এই কর্তাদের শোকজ করেছিল।

শোকজের জবাবে ক্রীড়া সচিবের ‘বোমা’
নির্ধারিত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত জবাব পাঠিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, ক্রীড়া সচিব রাজেশ কুমার সিনহা এবং বিধাননগর পুলিশ কমিশনার মুকেশ কুমার। সূত্রের খবর, ক্রীড়া সচিব রাজেশ কুমার সিনহা তাঁর জবাবে স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, অনুষ্ঠানের জন্য যে প্রাথমিক নীল নকশা বা পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়েছিল, বাস্তবের সঙ্গে তার কোনও মিল ছিল না। তিনি সরাসরি আঙ্গুল তুলেছেন আয়োজক সংস্থা ও শতদ্রু দত্তর দিকে। তাঁর দাবি, উদ্যোক্তাদের শেষ মুহূর্তের খামখেয়ালি পরিবর্তনের কারণেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা তছনছ হয়ে যায়।

২৩ মিনিটেই শেষ মেসির সফর!
যুবভারতীতে মেসিকে এক পলক দেখতে হাজার হাজার টাকা খরচ করে টিকিট কেটেছিলেন দর্শকরা। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর মাত্র ২৩ মিনিটের মাথায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন বিশ্বজয়ী ফুটবলার। অভিযোগ উঠেছে, ভিআইপি এবং রাজনৈতিক নেতাদের অতিরিক্ত ভিড়ে সাধারণ দর্শকরা মেসিকে দেখার সুযোগই পাননি। এর ফলে উত্তেজিত জনতা স্টেডিয়ামে ভাঙচুর চালায়। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে আয়োজক শতদ্রু দত্তকে।

নীরব রাজীব কুমার: উত্তরের অপেক্ষায় কমিটি
ক্রীড়া সচিব আয়োজকদের ওপর দায় চাপালেও, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার এবং বিধাননগর পুলিশ কমিশনার মুকেশ কুমার তাঁদের জবাবে ঠিক কী লিখেছেন, তা নিয়ে এখনও রহস্য বজায় রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা এই দায় এড়াতে পারেন কি না, এখন সেটাই বড় প্রশ্ন। রাজীব কুমার এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।

পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
তদন্ত কমিটি এখন এই তিন শীর্ষকর্তার রিপোর্ট খতিয়ে দেখবে। বিশেষ করে, যেখানে ক্রীড়া সচিব দাবি করেছেন যে আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব তাঁদের ছিল না, সেখানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কমিটি কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে গোটা রাজ্য। ফুটবল প্রেমীদের আক্ষেপ—তিলোত্তমার সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিল অব্যবস্থাপনার এই ‘মেসি-কাণ্ড’।