বিশেষ: যে কারণে রোলেক্স ঘড়ির এত দাম, দেখেনিন কি কারণে এতো দাম?

ঘড়ি প্রেমীদের কাছে ‘রোলেক্স’ (Rolex) কেবল একটি ব্র্যান্ড নয়, এটি একটি স্বপ্ন এবং আভিজাত্যের চূড়ান্ত পরিচয়। জেমস বন্ডের সিনেমা হোক বা বিশ্বের বাঘা বাঘা খেলোয়াড়দের কবজি—সবখানেই রোলেক্সের উপস্থিতি রাজকীয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন একটি রোলেক্স ঘড়ির দাম কয়েক লাখ থেকে শুরু করে কোটি টাকা পর্যন্ত হয়? এর নেপথ্যে রয়েছে এমন কিছু কারণ, যা জানলে আপনি অবাক হতে বাধ্য।

১. নিজস্ব ল্যাবে তৈরি স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু: অন্যান্য কোম্পানি বাজার থেকে সোনা বা ধাতব পদার্থ কিনলেও, রোলেক্স তা করে না। তাদের নিজস্ব ফাউন্ড্রি বা ল্যাবে ২৪ ক্যারেট সোনাকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ১৮ ক্যারেটের হলুদ, সাদা বা এভাররোজ গোল্ডে রূপান্তরিত করা হয়। এছাড়া এতে ব্যবহৃত হীরা ও রত্ন বাছাইয়ের জন্য কাজ করেন একদল বিশেষজ্ঞ ‘জেমোলজিস্ট’।

২. ৯০৪এল (904L) স্টেইনলেস স্টিলের ব্যবহার: সাধারণত দামি ঘড়িতে ৩১৬এল স্টিল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ২০০৩ সাল থেকে রোলেক্স ব্যবহার করছে ৯০৪এল স্টিল। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী, জং-রোধী এবং পালিশ করার পর এর উজ্জ্বলতা হয় দেখার মতো। তবে এই স্টিল প্রসেস করা অত্যন্ত কঠিন ও ব্যয়বহুল।

৩. সম্পূর্ণ হাতের কাজ (Hand Assembled): রোলেক্সের যন্ত্রাংশ তৈরিতে আধুনিক রোবট ব্যবহার করা হলেও, ঘড়ির প্রতিটি ছোট পার্টস জোড়া দেওয়া বা ‘অ্যাসেম্বল’ করার কাজটি করেন দক্ষ কারিগররা। মানুষের হাতের এই স্পর্শই প্রতিটি ঘড়িকে প্রাণবন্ত ও দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে।

৪. গভীর জলের অতল পরীক্ষা: রোলেক্সের ‘সাবমেরিনার’ মডেলগুলো জলের প্রায় ৩০০ মিটার নিচেও সম্পূর্ণ সচল থাকে। প্রতিটি ঘড়ি বাজারে ছাড়ার আগে উচ্চচাপ সম্পন্ন ট্যাংকে পরীক্ষা করা হয়। এই জল-অভেদ্য ক্ষমতাই একে সাধারণ ঘড়ি থেকে আলাদা করে।

৫. গবেষণায় কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ: একটি নতুন মডেল তৈরির আগে বছরের পর বছর গবেষণা চলে। তাদের রয়েছে নিজস্ব রসায়ন ও লুব্রিকেন্ট ল্যাবরেটরি। এই দীর্ঘ গবেষণার ফলেই একটি রোলেক্স ঘড়ি অনায়াসে ১০০ বছর টিকে যায়, যা একজন মানুষের গড় আয়ুষ্কালের চেয়েও বেশি।

৬. সময়সাপেক্ষ উৎপাদন: কোয়ালিটির সাথে কোনো আপস না করায় একটি মাত্র রোলেক্স ঘড়ি সম্পূর্ণ তৈরি হতে সময় লাগে প্রায় এক বছর। এই ধীর ও নিখুঁত উৎপাদন প্রক্রিয়াই এর বাজারমূল্য বাড়িয়ে দেয়।

দাম কত? সাধারণত একটি রোলেক্স ঘড়ির দাম ১০ থেকে ২০ হাজার ডলার (প্রায় ৯-১৭ লক্ষ টাকা) থেকে শুরু হয়। তবে ভিনটেজ মডেলগুলো ৩-৪ হাজার ডলারেও পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত নিলামে ওঠা সবচেয়ে দামি রোলেক্সটির দাম ছিল অবিশ্বাস্য ১ কোটি ৭৭ লক্ষ ৫২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৪৮ কোটি টাকারও বেশি)।