‘ক্ষমা চাইব না!’ অপারেশন সিঁদুর ও ১২ লক্ষ সেনা নিয়ে মন্তব্যে অনড় পৃথ্বীরাজ, তুঙ্গে বিতর্ক!

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সাম্প্রতিক জঙ্গি দমন অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং ভারতীয় স্থলবাহিনীর বিশাল বহর নিয়ে করা নিজের মন্তব্যে অনড় মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চৌহান। বুধবার সকালে স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানিয়ে দিলেন, ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর দাবি, সংবিধান তাঁকে প্রশ্ন তোলার অধিকার দিয়েছে এবং তিনি যা বলেছেন তার মধ্যে কোনো ভুল নেই।

ঠিক কী বলেছিলেন পৃথ্বীরাজ চৌহান? গত মঙ্গলবার পুনেতে এক অনুষ্ঠানে কংগ্রেসের এই বর্ষীয়ান নেতা দাবি করেন, অপারেশন সিঁদুরের প্রথম দিন ভারত পরাস্ত হয়েছিল। তাঁর যুক্তি, এই অভিযানে স্থলবাহিনী এক কিলোমিটারও এগোতে পারেনি, পুরো লড়াইটাই হয়েছে আকাশপথ ও ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে। এর পরেই তিনি একটি বিতর্কিত প্রশ্ন তোলেন— “ভবিষ্যতের যুদ্ধ যখন আকাশ ও প্রযুক্তি নির্ভর, তবে কেন ১২ লক্ষ পদাতিক সেনার বিশাল বহর পুষতে হবে? এই বিপুল খরচ কি আধুনিক যুদ্ধপ্রযুক্তিতে ব্যবহার করা যায় না?”

বিতর্কের ময়নাতদন্ত: কেন পৃথ্বীরাজের মন্তব্যে শোরগোল? বিজেপি নেতারা এই মন্তব্যকে সেনার অপমান বলে দেগে দিলেও, আন্তর্জাতিক সমরকৌশল নিয়ে চৌহানের যুক্তি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে দিয়েছে:

প্রযুক্তি বনাম ম্যানপাওয়ার: আমেরিকা বা ইসরায়েলের মতো দেশ এখন ড্রোন, এআই (AI) এবং সাইবার যুদ্ধের দিকে বেশি ঝুঁকছে।

বিশাল ব্যয়ভার: সেনার বেতন ও পেনশনে বাজেটের একটা বড় অংশ খরচ হয়ে যায়। এই খরচ কমাতে পারলে আধুনিক অস্ত্র কেনা সহজ হতো।

বিপরীত যুক্তি: তবে ভারতের ক্ষেত্রে চিন ও পাকিস্তানের মতো দীর্ঘ সীমান্ত পাহারা দিতে এবং অনুপ্রবেশ রুখতে স্থলবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কারগিল বা গালওয়ান প্রমাণ করেছে যে, শুধু আকাশপথ দিয়ে ভূখণ্ড রক্ষা সম্ভব নয়।

বিশ্বের সমরাস্ত্রের মানচিত্র (SIPRI 2025 রিপোর্ট): পৃথ্বীরাজ চৌহান সেনাবহর কমানোর কথা বললেও, ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে উল্টো কথা:

২০২৪ সালে বিশ্বে প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বেড়েছে ২.৭১৮ ট্রিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৯.৪ শতাংশ বেশি।

প্রতিরক্ষা বাজেটে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের তালিকায় ভারত এখন পঞ্চম স্থানে।

গত ১০ বছরে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংঘর্ষের আবহে সারা বিশ্ব যখন অস্ত্রভাণ্ডার সাজাতে মরিয়া, তখন পৃথ্বীরাজ চৌহানের এই ‘ম্যানপাওয়ার’ কমানোর পরামর্শ ভারতীয় প্রতিরক্ষা নীতিতে নতুন কোনো বিতর্ক উস্কে দেয় কি না, সেটাই এখন দেখার।