মতুয়া গড়ে অশনিসংকেত! ভোটার তালিকা থেকে বাদ ৮৬ হাজার নাম, নাগরিকত্ব হারানো আতঙ্কে ঠাকুরবাড়ি!

‘মতুয়া গড়’ বলে পরিচিত উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত এলাকায় এবার ভোটার তালিকা নিয়ে শুরু হয়েছে নজিরবিহীন আতঙ্ক। নির্বাচন কমিশনের খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়তে চলেছে কয়েক হাজার মতুয়াপন্থী মানুষের নাম। পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র বনগাঁ মহকুমা থেকেই ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৭৬২ জন মানুষকে হিয়ারিংয়ে ডাকা হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৮৬,১৬৯ জন ভোটারের নাম বাদ পড়ে যাওয়ায় নতুন করে নাগরিকত্ব সংকটের কালো মেঘ ঘনাচ্ছে ঠাকুরনগরে।

বিপাকে মতুয়ারা: পরিসংখ্যানের ভয়াবহ চিত্র বনগাঁ উত্তর, দক্ষিণ, গাইঘাটা এবং বাগদা—এই চারটি বিধানসভা মূলত মতুয়া অধ্যুষিত। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী:

উত্তর ২৪ পরগনার ৩৩টি বিধানসভায় মোট ৭ লক্ষ ৯২ হাজার ১৩৩ জনের নাম কাটা গিয়েছে।

শুধুমাত্র বনগাঁ মহকুমায় ৮৬ হাজার ১৮৯ জনের নাম বাদ পড়েছে।

গাইঘাটাতেই ৩৮,৮৪৯ জন ভোটারকে হিয়ারিংয়ে হাজির হতে হবে, যাদের সিংহভাগই মতুয়া।

অভিযোগ, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় এখানকার মাত্র ১৫ শতাংশ মতুয়ার নাম রয়েছে।

রক্তচাপ বাড়ছে রাজনৈতিক দলগুলোর ২০০২-এর ভোটার তালিকায় নাম না থাকা এবং প্রয়োজনীয় নথির অভাবে মতুয়ারা এখন দিশেহারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর ও তাঁর দাদা বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর ঠাকুরবাড়িতে পৃথক ক্যাম্প খুলেছেন। সুব্রত ঠাকুরের দাবি, তাঁর ক্যাম্পে ১৫ হাজার আবেদন জমা পড়লেও নাগরিকত্ব পেয়েছেন মাত্র ১৫০-২০০ জন।

সুব্রত ঠাকুর অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, “ফাইনাল লিস্টে দেখা যাবে কারও নাম বাদ পড়েনি। আমরা নথির বিষয়টি দেখছি।”

‘বিজেপির চক্রান্ত’, সরব মমতাবালা তৃণমূল প্রভাবিত মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুর এই ঘটনায় সরাসরি কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁর দাবি, “হিয়ারিংয়ে ডাক পাওয়া ভোটারদের ৮৫ শতাংশই মতুয়া। তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় নথি নেই। বিজেপি এতদিন ভোট নিলেও এখন তাঁদের নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করছে।”

আতঙ্কে সাধারণ ভোটার গোপালনগরের ভোলা রায়ের মতো হাতেগোনা কয়েকজনের কাছে নথি থাকলেও, সিংহভাগ মতুয়াই এখন ‘ডাউটফুল’ ভোটারের তকমা পাওয়ার ভয়ে দিন গুনছেন। জীবন-মরণ লড়াই করে এ দেশে আসা এই মানুষদের ভোটব্যাঙ্ক আগামী নির্বাচনে কার পাল্লা ভারী করবে, নাকি ভোটাধিকার হারানোর যন্ত্রণায় পুড়বে ঠাকুরবাড়ি—এখন সেটাই দেখার।