পুরুলিয়ার লাল মাটিতে ‘মিষ্টি’ ম্যাজিক! দার্জিলিং নয়, ঘরের পাশেই ফলছে রসালো কমলালেবু

শীতকাল মানেই রোদ পোহাতে পোহাতে টক-মিষ্টি কমলালেবুতে কামড়। আর কমলালেবু বললেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে উত্তরবঙ্গের পাহাড় কিংবা সুদূর নাগাল্যান্ডের ছবি। কিন্তু এবার সবাইকে চমকে দিয়ে পাহাড়ের একচেটিয়া অধিকারে ভাগ বসাল পুরুলিয়ার রুক্ষ লাল মাটি। যেখানে জলের অভাবে সাধারণ চাষবাসই দায়, সেখানেই এখন ডাল ভরে ঝুলে রয়েছে থোকা থোকা কমলালেবু!
অসাধ্য সাধন বাঘমুণ্ডির লালিমার পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি ব্লকের বুরদা গ্রাম। এই গ্রামেরই গৃহবধূ লালিমা মাহাতোর হাত ধরে ঘটেছে এই অসাধ্য সাধন। কোনও উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নয়, বরং নেহাতই কৌতূহল আর ধৈর্যকে সঙ্গী করে নিজের অনাবাদী জমিতে কমলার বাগান তৈরি করেছেন তিনি। পরিস্থিতি এমন যে, ফলের ভারে নুয়ে পড়ছে গাছের ডাল।
ফেলে দেওয়া বীজ থেকেই বিপ্লব! গল্পটা সিনেমার মতো হলেও সত্যি। লালিমা আর পাঁচজনের মতো কমলালেবু খেয়ে বীজগুলো বাড়ির পাশের জমিতে ফেলে দিতেন। মনে সংশয় ছিল—লাল মাটিতে কি আদেও গাছ হবে? কিন্তু সেই ফেলে দেওয়া বীজ থেকেই চারা বেরোলে শুরু হয় তাঁর লড়াই। অযত্নে পড়ে থাকা চারার যত্ন নিতে শুরু করেন জৈব সার দিয়ে। কয়েক বছর যেতে না যেতেই ফলন দেখে চক্ষু চড়কগাছ স্থানীয়দের!
স্বাদে-গন্ধে টেক্কা দেবে উত্তরবঙ্গকে বাঘমুণ্ডির এই কমলালেবু স্বাদে ও গন্ধে উত্তরবঙ্গের কমলার থেকে কোনও অংশে কম নয়। পাহাড়ের কমলালেবুর যে টক-মিষ্টি স্বাদ মানুষ পছন্দ করেন, তার সবটাই মজুত লালিমার এই বাগানে। পাহাড় বা সমতল নয়, মালভূমির রুক্ষ মাটিতে এই অপ্রত্যাশিত চাষ এখন লাভের মুখ দেখাচ্ছে তাঁকে।
অবাক পর্যটক থেকে এলাকাবাসী পুরুলিয়ায় ঘুরতে আসা পর্যটকরা এখন বাঘমুণ্ডির এই কমলা বাগান দেখে থমকে দাঁড়াচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে লাল মাটিতে হলুদ কমলার ছবি। রুক্ষ জমিতেও যে ইচ্ছা থাকলে সোনা ফলানো যায়, লালিমা মাহাতো এখন তার জীবন্ত উদাহরণ। তাঁর এই সাফল্য এখন জেলার অন্য চাষিদেরও নতুন পথের দিশা দেখাচ্ছে।