উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধাক্কা! রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার প্রস্তাবে ‘না’ রাষ্ট্রপতির!

রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় বড়সড় পরিবর্তনের উদ্যোগে আপাতত স্থগিতাদেশ। রাজ্য-সহায়তাপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর যে সংশোধনী বিলগুলি রাজ্য সরকার বিধানসভায় পাস করেছিল, তাতে শেষ পর্যন্ত সম্মতি দিলেন না রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ফলে এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য বা চ্যান্সেলর পদে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না, স্থিতাবস্থাই বহাল থাকছে।
উচ্চশিক্ষা প্রশাসনে নিজেদের নিয়ন্ত্রণের পরিধি বাড়াতে নবান্ন ২০২২ সালে বিধানসভায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস করে— ‘পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় আইন (সংশোধনী) বিল’ এবং আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট বিল। এই বিলগুলিতে আচার্য/আমির-ই-জামিয়া পদে রাজ্যপালের পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। গত ২০ এপ্রিল ২০২৪-এ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সাংবিধানিক নিয়ম মেনে বিলগুলি রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য পাঠিয়েছিলেন।
রাজ্যপালের ভূমিকাই বহাল: রাষ্ট্রপতির এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসেবে রাজ্যপালের ভূমিকাই বহাল থাকছে। অর্থাৎ, উপাচার্য নিয়োগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার রাশ আপাতত রাজ্যপালের হাতেই থাকছে।
রাজনৈতিক ও শিক্ষামহলের একাংশের মতে, উপাচার্য নিয়োগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা নিয়ে রাজ্য ও রাজভবনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাতের আবহে সরকারের এই উদ্যোগ ছিল আচার্যের ক্ষমতা ‘খর্ব’ করার চেষ্টা। নবান্নের যুক্তি ছিল, প্রশাসনিক গতি আনা এবং শিক্ষায় অচলাবস্থা কাটাতে নির্বাচিত সরকারের প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে এই দায়িত্ব থাকা উচিত।
তবে সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলছিলেন যে, পদাধিকার বলে রাজ্যপাল যে পদে রয়েছেন, তা পরিবর্তন করে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানো সংবিধানের মূল কাঠামোর সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। কেন্দ্রীয় স্তরে পর্যালোচনার পর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর অসম্মতি কার্যত এই আইনি জটিলতার ইঙ্গিত দিল।
অন্যদিকে, বিরোধী দল বিজেপি প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছিল যে, এই বিলের উদ্দেশ্য হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বাড়ানো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসন ক্ষুণ্ণ করা। রাষ্ট্রপতির এই সিদ্ধান্তের পর শিক্ষাপ্রশাসনে বড় বদল আনার সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ আপাতত আটকে গেল।