আন্তর্জাতিক জলসীমা লঙ্ঘনের দায়ে বাংলাদেশের জেলে বিচারাধীন অবস্থায় মৃত্যু হলো দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের পশ্চিম গঙ্গাধরপুর এলাকার যুবক বাবুল দাস (২৫)-এর। জন্ম থেকেই বিশেষভাবে সক্ষম (মূক ও বধির) ছিলেন বাবুল। দারিদ্র্যের কারণে সংসারের হাল ধরতে তাঁকে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে হত। শনিবার তাঁর মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছতেই তাঁর পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়ে।

হৃদরোগ না অত্যাচার? মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ হাই কমিশনের তরফে বাবুল দাসের পরিবারকে জানানো হয়েছে, বিচারাধীন অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে পরিবারের সদস্যরা এই ‘হৃদরোগে মৃত্যুর’ তত্ত্ব মানতে নারাজ।

মৃতের ভাই বাসুদেব দাস জানান, শনিবার দুপুরে হারউড পয়েন্ট কোস্টাল থানার পুলিশ মারফত তাঁরা প্রথম খবর পান। বাসুদেব দাস দাবি করেন, “দাদা বোবা ও কালা হলেও অন্যকোনও শারীরিক অসুস্থতা ছিল না। বরং বেশ সুস্থ সবলই ছিল। এই মৃত্যু সন্দেহজনক। আমরা আশঙ্কা করছি, জেলের মধ্যে তাঁর উপর অত্যাচার করে তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে। মৃতদেহ কাকদ্বীপে এনে আমরা দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তও করাতে চাই।”

যেভাবে ঘটেছিল ঘটনা
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৩ জুলাই রবিবার ‘এফবি মঙ্গলচণ্ডী’ ও ‘এফবি ঝড়’ নামে কাকদ্বীপের দু’টি ট্রলার ইলিশ ধরতে গভীর সমুদ্রে গিয়ে ভুলবশত বাংলাদেশ জলসীমা অতিক্রম করে ফেলে। এই অভিযোগে বাংলাদেশ নৌবাহিনী মোট ৩৪ জন ভারতীয় মৎস্যজীবীর সঙ্গে ট্রলার দু’টি আটক করে। এরপর ১৫ জুলাই মৎস্যজীবীদের গ্রেফতার করে মংলা পোর্ট থানার পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। বাগেরহাট আদালতের নির্দেশে সেই থেকেই তাঁরা বাংলাদেশের জেলে বিচারাধীন বন্দি হিসেবে রয়েছেন। শনিবার আটক হওয়া ট্রলার ‘মঙ্গলচণ্ডী’-এর মৎস্যজীবী বাবুল দাস ওরফে ‘বোবা’-র মৃত্যুর খবর তাঁর পরিবারের কাছে আসে।

পাশে থাকার আশ্বাস মৎস্যজীবী সংগঠনের
খবর পেয়ে শোকাহত পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন সুন্দরবন শ্রমজীবী মৎস্য ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র। তিনি জানান, যত শীঘ্র সম্ভব বাবুলের দেহ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে।

সতীনাথ পাত্র বলেন, “মৃত ওই মৎস্যজীবী কাকদ্বীপের ৮ নম্বর পশ্চিম কালিনগরের বাসিন্দা ছিলেন। বাংলাদেশে জেলবন্দি থাকা তাঁর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর অত্যন্ত দুঃখজনক।” সংগঠনটি শোকগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সবরকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।