সোমবার লালকেল্লার ভয়াবহ বিস্ফোরণের আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই শুক্রবার রাতে এক মর্মান্তিক ঘটনায় কেঁপে উঠল দক্ষিণ শ্রীনগর। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ভয়ংকর বিস্ফোরণে ভস্মীভূত হয়ে যায় নওগাম থানা (Nowgam blast)। এই ঘটনায় মোট ৯ জন নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৫৭ বছর বয়সী এক দর্জি, মহম্মদ শাফি শেখও ছিলেন।

মেয়ের শেষ আর্জি
ঘটনার দিন ফরিদাবাদ থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকের নমুনা সংগ্রহ করেছিল পুলিশ ও ফরেন্সিক দল। সংগৃহীত সেই নমুনা ব্যাগে ভরার পর ব্যাগগুলো সেলাই করার জন্য ডাকা হয়েছিল দর্জি শাফি শেখকে।

রাত ৯টা নাগাদ শাফি যখন রাতের খাবার খেতে বাড়ি ফেরেন, তখন তাঁর মেয়ে তাঁকে বাইরে যেতে বারণ করে কাতর কণ্ঠে বলেছিল, “বাবা যেও না।” কিন্তু পুলিশের ‘জরুরি কাজ’ শেষ করার তাগিদে মেয়ের আর্জি অমান্য করেন শফি। শেষ পর্যন্ত, সেই রাতেই শেষ হয়ে যান তিনি।

ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার হলো ছিন্নভিন্ন দেহ
বিস্ফোরণের তীব্রতায় নওগাম থানা কার্যত ধংসস্তূপে পরিণত হয়। মৃতদেহগুলি শনাক্ত করাই ছিল কঠিন কাজ। বহু ঘণ্টার খোঁজাখুঁজির পর পুলিশ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে শাফি শেখের ছিন্নভিন্ন দেহ উদ্ধার করে। শাফির পরিবার এখনও তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে এই মৃত্যুর খবর জানাতে পারেনি।

শাফি শেখের আত্মীয় তারিক আহমেদ বলেন, “শাফি শেখই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য। তিনি পুলিশ দলের সঙ্গে যুক্তও ছিলেন না। এখন তাঁর মৃত্যুর পর পরিবার কীভাবে চলবে, এই নিয়েই দুশ্চিন্তা।” তারিক প্রশ্ন তোলেন, “পুলিশবাহিনীতে কল সারানো বা অন্যান্য কাজের জন্য কর্মী নিয়োগ করা হলেও, দর্জির (Tailor) জন্য কেন কোনও স্থায়ী পদ থাকবে না? শাফি যদি পুলিশ দলের অংশ হতেন, তাহলে অন্তত এখন তাঁর পরিবারকে আর্থিক নিরাপত্তার চিন্তা করতে হতো না।” শোকাহত পরিবারটি অবিলম্বে জনবসতি থেকে নওগাম থানা স্থানান্তরিত করার দাবি জানিয়েছে।

ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলেন ওমর আব্দুল্লাহ
নওগাম থানা বিস্ফোরণ কাণ্ডে নিহত ৯ জনের মধ্যে ছিলেন— রাজ্য তদন্তকারী দলের ১ অফিসার, ৩ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ, ২ পুলিশ চিত্রশিল্পী, ২ রাজস্ব দফতরের আধিকারিক এবং দর্জি শাফি শেখ। মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। আহত ২৯ পুলিশ সদস্য, ২ রাজস্ব আধিকারিক ও ৩ সাধারণ নাগরিকের জন্য ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণাও করা হয়েছে।