সত্যিই কি ভবিষ্যতে ফোন-কম্পিউটার থাকবে না? জেনেনিন কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ইলন মাস্ক যখনই কোনো স্বপ্ন দেখেন, তা কেবল প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন থাকে না; তা হয়ে ওঠে মানব জাতির ভবিষ্যতের নতুন দিগন্ত। টেসলা এবং স্পেসএক্স-এর সাফল্যের পর এবার তাঁর নতুন লক্ষ্য মানুষের মস্তিষ্ক। তাঁর রহস্যময় সংস্থা নিউরোলিংক (Neuralink) মানব-মস্তিষ্ক এবং ডিজিটাল জগতের মধ্যকার সব বাধা মুছে দিতে চলেছে। মাস্কের দাবি, এই অত্যাধুনিক ‘ব্রেইন চিপ’ ভবিষ্যতে আমাদের হাতে থাকা ফোন ও কম্পিউটারকে অপ্রয়োজনীয় করে তুলবে।
নিউরোলিংক: মানব-মস্তিষ্কের ডিজিটাল ইন্টারফেস
নিউরোলিংক হলো একটি অত্যাধুনিক ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI) প্রযুক্তি, যা মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করা হয়। এই প্রযুক্তির মূল ডিভাইস, যা ‘লিঙ্ক’ নামে পরিচিত, দেখতে একটি ছোট কয়েনের মতো। অত্যাধুনিক রোবটিক সার্জনের সাহায্যে এটি মাথার খুলির অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয়।
এই চিপে থাকা হাজার হাজার সূক্ষ্ম ইলেকট্রোড মস্তিষ্কের নিউরন থেকে আসা বৈদ্যুতিক সংকেত শনাক্ত করে এবং সেগুলোকে ডিজিটাল সংকেতে রূপান্তরিত করে। সহজ কথায়, নিউরোলিংক আপনার চিন্তা, অনুভূতি বা আদেশকে নিখুঁতভাবে শনাক্ত করে একটি ‘কমান্ড’-এ পরিণত করে। এই কমান্ড ওয়্যারলেস প্রযুক্তির (যেমন- ব্লুটুথ) মাধ্যমে সরাসরি কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে চলে যায়। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে আপনি কোনো কাজ করার কথা ভাবলে, তা বাহ্যিক কোনো ডিভাইস ছাড়াই সরাসরি হয়ে যাবে।
কেন এই ‘ব্রেইন চিপ’? ইলন মাস্কের বৃহত্তর লক্ষ্য
প্রাথমিকভাবে, নিউরোলিংকের লক্ষ্য হলো মেরুদণ্ডে আঘাত বা পক্ষাঘাতের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া—তাদের শুধু চিন্তা ব্যবহার করে কম্পিউটার কার্সর বা হুইলচেয়ার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেওয়া। তবে ইলন মাস্কের দৃষ্টি আরও অনেক বড়:
-
এআই ঝুঁকি মোকাবিলা: মাস্ক মনে করেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) একদিন মানুষের চেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট বা সুপার ইন্টেলিজেন্ট হয়ে উঠবে, যা মানব জাতির অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
-
মানব বুদ্ধিমত্তার আপগ্রেড: এই ঝুঁকি থেকে বাঁচতে মানুষের বুদ্ধিমত্তাকেও এআইয়ের সমতুল্য বা তার চেয়ে উন্নত করা প্রয়োজন। নিউরোলিংক মানুষকে এআইয়ের সাথে একীভূত হতে সাহায্য করবে, যেখানে মানুষ যন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ না করে বরং তার সাথে অংশীদারত্ব স্থাপন করবে।
-
‘সুপার হিউম্যান’ পর্যায়: তাঁর মতে, এটি মানব মস্তিষ্ককে একটি ‘সুপার হিউম্যান’ পর্যায়ে উন্নীত করার চাবিকাঠি।
সাফল্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
নিউরোলিংক এরই মধ্যে মানুষের ওপর পরীক্ষা শুরু করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (FDA) থেকে অনুমোদন পেয়েছে। ২০২৪ সালের প্রথমদিকে একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কে সফলভাবে চিপ প্রতিস্থাপন করা হয়। ওই ব্যক্তি শুধু চিন্তা ব্যবহার করেই কম্পিউটার মাউসের কার্সর নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছেন, যা প্রযুক্তির ইতিহাসে এক বিশাল অগ্রগতি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রযুক্তি খাতে ইলন মাস্কের দূরদর্শিতা তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে। যখন মানুষের চিন্তা সরাসরি ডিজিটাল কমান্ডে রূপান্তরিত হবে, তখন হাতে থাকা ফোন বা কম্পিউটারের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে। সেই দিন আর বেশি দূরে নয়, যখন মানুষ নিজের মস্তিষ্কের শক্তি দিয়ে প্রযুক্তির সীমা ছাড়িয়ে যাবে এবং ফোন বা কম্পিউটার শুধু অতীতের স্মৃতি হয়ে থাকবে। নিউরোলিংকের এ যাত্রা অনেক চ্যালেঞ্জ ও নৈতিক প্রশ্নের মধ্য দিয়ে গেলেও, ইলন মাস্কের স্বপ্ন সত্যি হলে এটি মানব মস্তিষ্ক ও ডিজিটাল জগতের মিলনের দুয়ার খুলে দেবে।