বর্ষা বিদায়ের মুখে চরম উদ্বেগ! ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ সেমি বাড়ল ফুলহরের জল, মালদহে ফিরছে বন্যার আতঙ্ক

উত্তরবঙ্গে প্রবল বৃষ্টিতে ৩৬ জনের প্রাণহানির পর সেখানে নদীর জল নামতে শুরু করলেও, এবার নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মালদহের গঙ্গা ও ফুলহর নদী। টানা জল কমার পর সোমবার থেকে হঠাৎ করেই এই দুই নদীর জলস্তর দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করেছে। যদিও মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত মহানন্দা নদীর জলস্তর অপরিবর্তিত রয়েছে।
নেপাল, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের অতিরিক্ত বৃষ্টির জল গঙ্গা ও ফুলহরে নেমে আসার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছে সেচ দফতর। নদীর জলস্তর দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীপাড়ের বাসিন্দারা পুনরায় বন্যার আশঙ্কায় ভুগছেন।
কতটা জল বেড়েছে?
জেলা সেচ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দুই নদীর জলস্তর উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে:
ফুলহর: মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ফুলহরের জলস্তর ছিল ২৬.০২ মিটার। গতকালের তুলনায় ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ সেন্টিমিটার জল বেড়েছে। এই গতিতে জল বাড়তে থাকলে ৩-৪ দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গঙ্গা: একই সময়ে গঙ্গার জলস্তর ছিল ২৩.৯২ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় এই নদীর জল বেড়েছে ১৪ সেন্টিমিটার।
দুই নদীর জল এখনও বিপদসীমার (গঙ্গা: ২৪.৬৯ মিটার, ফুলহর: ২৭.৫৩ মিটার) অনেকটা নীচে থাকলেও, এই দ্রুত জলবৃদ্ধিই এখন মালদহবাসীর প্রধান চিন্তার কারণ।
উদ্বেগে নদীপাড়ের বাসিন্দারা
চলতি মরশুমে এর আগেও দু’বার গঙ্গার জলে বন্যার কবলে পড়েছে ভূতনি চর এবং বানভাসি হয়েছে কালিয়াচক-৩ ব্লকের একাধিক গ্রাম। এমনকি দু’দশক পর গঙ্গার ভাঙন দেখা গিয়েছিল কালিয়াচক-২ ব্লকেও। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গা-ফুলহরের জলস্তর আবার বাড়তে শুরু করায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
ভূতনি চরের বাসিন্দা মহম্মদ ওয়াসিমের কথায়, “বর্ষা বিদায়ের মুখে হঠাৎ নিম্নচাপের বৃষ্টি শুরু হয়েছে উত্তর ভারতে। সেই জলই গঙ্গা-ফুলহরে নেমে আসছে। আর ৩-৪ দিন এভাবে জল বাড়লে আবারও ভূতনির পরিস্থিতি মারাত্মক আকার নেবে। ইতিমধ্যেই পুলিনটোলা ঢাবে গঙ্গার জল ঢুকতে শুরু করেছে।”
হরিশ্চন্দ্রপুরের দৌলতনগরের বাসিন্দা শাহজাহান আলির মতে, ২৪ ঘণ্টায় ফুলহরের ৫৫ সেন্টিমিটার জলস্তর বৃদ্ধি অস্বাভাবিক। নেপালের কোশি নদীর জলেই ফুলহর হঠাৎ করে ফুলেফেঁপে উঠেছে বলে তাঁর ধারণা।
জেলা সেচ দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, উত্তর ভারত ও নেপালে বৃষ্টির কারণেই জলস্তর বাড়ছে। আরও কয়েকদিন এই দুই নদীর জলস্তর বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পরিস্থিতির উপর ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালানো হচ্ছে এবং তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলেই কাজ শুরু করার জন্য তারা প্রস্তুত।