জুতো ছোড়ার পরেও ক্ষমা চাইবেন না! প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এবার সরাসরি ‘সনাতন ধর্ম বিরোধী’ তকমা দিলেন আইনজীবী

দেশের প্রধান বিচারপতি (Chief Justice of India) বিআর গাভাইকে জুতো ছুঁড়ে বিতর্কের জন্ম দেওয়া বর্ষীয়ান আইনজীবী রাকেশ কিশোর তাঁর কৃতকর্মের জন্য একটুও অনুতপ্ত নন। বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার তরফে সাময়িক বরখাস্ত (Suspend) হওয়ার পরেও তিনি ক্ষমা চাইতে নারাজ। ৭২ বছর বয়সী এই প্রবীণ আইনজীবী মঙ্গলবার সরাসরি অভিযোগ করেছেন যে, প্রধান বিচারপতি সনাতন ধর্ম (Sanatan Dharma) নিয়ে মন্তব্য করে হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত করেছেন। তাঁর দাবি, বিচার বিভাগের একাংশ সনাতন ধর্ম নিয়ে একপেশে মনোভাব পোষণ করে।

‘মনের দুঃখ থেকে করেছি, রাগবশত নয়’
রাকেশ কিশোর স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাঁর এই কাজ ‘রাগবশত নয়’, বরং প্রধান বিচারপতির মন্তব্যে ‘মনের দুঃখ’ থেকেই তিনি এমনটা করেছেন। তাই তাঁর মনে কোনও অনুশোচনা বা অনুতাপ নেই।

তাঁর অভিযোগ, গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি গাভাই নাকি হিন্দুদের সনাতন ধর্মকে অপমান করেছেন এবং সবার সামনে বিষ্ণুর বিগ্রহ নিয়ে ‘মজা’ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, “আমি যা করেছি তা নিয়ে ভয় পাই না, যা ঘটেছে তা নিয়ে কোনও অনুশোচনাও নেই আমার।” যদিও দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী সহ সব দলের নেতারাই প্রবীণ আইনজীবীর এহেন আচরণের তীব্র নিন্দা করেছেন।

আদালতের বিরুদ্ধে ‘সনাতন বিদ্বেষ’-এর অভিযোগ
রাকেশ কিশোরের গুরুতর অভিযোগ, অন্য ধর্ম সংক্রান্ত মামলায় বিচার ব্যবস্থার আচরণ একরকম হলেও, যখন ‘হিন্দু ঐতিহ্য-পরম্পরা’ সংক্রান্ত মামলা (যেমন: জালিকাট্টু, দহিহান্ডির উচ্চতা) আদালতে আসে, তখন সুপ্রিম কোর্ট ‘কঠোর ভূমিকা’ নেয়। তাঁর প্রশ্ন, “সুপ্রিম কোর্টের এ ধরনের নির্দেশ বা রায় দেওয়া উচিত নয়।”

প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে কড়া বার্তা
প্রধান বিচারপতিকে নিশানা করে এই প্রবীণ আইনজীবী বলেন, সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে বসে থাকা প্রধান বিচারপতিকে ‘মিলর্ড’ (My Lord) শব্দের অর্থ অনুধাবন করতে হবে এবং সেই মতো নিজের সম্মান বজায় রাখতে হবে।

তিনি প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, “আপনি মরিশাসে গিয়ে বলুন তো, দেশ বুলডোজারের উপর ভিত্তি করে চলতে পারে না।” তিনি যোগী আদিত্যনাথের বুলডোজার পদক্ষেপের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে প্রশ্ন তোলেন, যারা সরকারি সম্পত্তি জবরদখল করে রেখেছে, তাদের উচ্ছেদ করতে বুলডোজার চালিয়ে কি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অন্যায় কিছু করছেন?

‘আমি কোনও রাজনৈতিক দলের লোক নই’
নিজের কাজের সাফাই দিয়ে রাকেশ কিশোর জোরের সঙ্গে জানান, তিনি কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তাঁর পিছনে কারও মদতও নেই। তিনি বলেন, তিনি হিংসার ঘোরতর বিরোধী এবং তাঁর বিরুদ্ধে আজকের দিন পর্যন্ত কোনও অপরাধমূলক মামলাও নেই। তাঁর এই কাজ প্রমাণ করে যে, একজন অহিংস, সৎ ও সাধারণ মানুষ কেন এমন কাজ করবে, এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনো গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে।

তাঁর শেষ অভিযোগ ছিল, প্রধান বিচারপতি আবেদনকারীর আর্জি খারিজ করতেই পারেন, কিন্তু তাকে নিয়ে মজা করা উচিত নয়।