‘এটা দেশ গড়ার সময়, ন্যারেটিভ তৈরির নয়’— প্রধানমন্ত্রীকে কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর!

উত্তরবঙ্গের ধস বিধ্বস্ত নাগরাকাটা পরিদর্শনে গিয়ে বিজেপি সাংসদ ও বিধায়কের উপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবার সরাসরি সংঘাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে।
হামলার ঘটনা:
নাগরাকাটার বামনডাঙা এলাকায় ধস-দুর্গতদের পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। সেখানেই তাঁরা বিক্ষোভের মুখে পড়েন। অভিযোগ, ভিড়ের মধ্যে সাংসদ খগেন মুর্মুর মাথা ফেটে যায় এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর, জুতো, লাঠি ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার পর বিজেপি নেতৃত্ব তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার পিছনে থাকার অভিযোগ এনেছেন। আহত সাংসদ খগেন মুর্মুকে মাটিগাড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কড়া আক্রমণ:
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে তৃণমূলকে নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, “জনগণের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে দলীয় সহকর্মীদের উপর হামলা করা হয়েছে। যেভাবে হামলা হয়েছে, তা তৃণমূলের অসংবেদনশীল আচরণকেই প্রকাশ্যে এনেছে।”
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, এই হামলা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা অবস্থার শোচনীয় পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে দিয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে “এই কঠিন পরিস্থিতিতে হিংসার বদলে জনসেবায় মন দেবে তৃণমূল” এবং “সন্ত্রাসে সামিল হওয়ার বদলে জনগণের কথা ভাববে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।” প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলীয় নেতা-কর্মীদেরও দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন।
পাল্টা তোপ মুখ্যমন্ত্রীর:
প্রধানমন্ত্রীর এই আক্রমণের জবাবে পাল্টা কড়া বিবৃতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘বিভাজনের রাজনীতি’ করার অভিযোগ তুলেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যথোপযুক্ত তদন্ত ছাড়াই জাতীয় বিপর্যয় নিয়ে রাজনীতি করছেন প্রধানমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গের মানুষ যখন বন্যা ও ধসের সঙ্গে লড়াই করছেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর এধরনের রাজনীতি করার চেষ্টা দুর্ভাগ্যজনক এবং উদ্বেগের।”
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “পুলিশকে না জানিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে হাজির বিজেপি নেতারা। কাউকে না জানিয়েই দুর্গত এলাকায় গিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা, তাহলে কীভাবে রাজ্য সরকার, পুলিশ কিংবা তৃণমূলকে দায়ী করা হচ্ছে?”
মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণকে অপরিণত আখ্যা দিয়ে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেশ গড়ার, ন্যারেটিভ তৈরি করা নয়।” তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর দায়িত্ব মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, “আপনি বিজেপির নয়, দেশের প্রধানমন্ত্রী, দুঃসময়ে আমাদের এক হতে হবে।” একইসঙ্গে তিনি আশ্বাস দেন যে “আইন আইনের পথে চলবে, দোষীরা কেউ ছাড় পাবে না।”