৩.৫ লক্ষ কোটি টাকার ‘হারানো ধন’! সুপ্রিম কোর্টের তোপে RBI, SEBI, আপনার দাবিহীন টাকা কি ফেরত আসবে?

দেশের কোটি কোটি নাগরিকের অদাবিকৃত (Unclaimed) এবং নিষ্ক্রিয় (Inoperative) আর্থিক সম্পদ নিয়ে সোমবার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। দেশের সর্বোচ্চ আদালত কেন্দ্র, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI), সেবি (SEBI) এবং আইআরডিএআই (IRDAI)-সহ একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নোটিশ জারি করেছে।
কী নিয়ে এই নির্দেশ?
সামাজিক কর্মী আকাশ গোয়েল-এর দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলার (PIL) ভিত্তিতে বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। পিটিশনে দাবি করা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ তার প্রকৃত মালিক বা উত্তরাধিকারীর কাছে পৌঁছতে পারেনি।
আদালত এই সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে যে, এই বিপুল পরিমাণ দাবিহীন সম্পদ অনুসন্ধান করে তা সঠিক মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়ার জন্য একটি ব্যাপক আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির প্রস্তাব নিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে হবে।
কেন ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকা ‘হারিয়ে’ গেল?
পিটিশনের তথ্য অনুযায়ী, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ছড়িয়ে আছে দেশের বিভিন্ন আর্থিক ক্ষেত্রে:
৯.২২ কোটিরও বেশি নিষ্ক্রিয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যার প্রতিটিতে গড়ে প্রায় ৩,৯১৮ টাকা জমা রয়েছে।
ব্যাঙ্ক, মিউচুয়াল ফান্ড, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং ছোট সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে বিপুল পরিমাণ টাকা জমে আছে।
শুধুমাত্র ইনভেস্টর এডুকেশন অ্যান্ড প্রোটেকশন ফান্ড (আইইপিএফ)-এ প্রায় ১৮,০০০ কোটি টাকার অদাবিকৃত ডিভিডেন্ড ও শেয়ার রয়েছে।
সবচেয়ে গুরুতর তথ্য হলো: আরটিআই (RTI) অনুযায়ী, পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কের প্রায় ২৯.৮ কোটি অ্যাকাউন্টে নমিনির তথ্য নেই, যার ফলে প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকার ব্যালেন্স ঝুঁকিতে রয়েছে!
আদালতের কাছে পিটিশনকার্তার মূল দাবি কী?
এই সমস্যার সমাধানে পিটিশনকারী সুপ্রিম কোর্টের কাছে দুটি মূল দাবি তুলেছেন:
১. কেন্দ্রীয় ডিজিটাল পোর্টাল: একটি কেন্দ্রীয় ডিজিটাল পোর্টাল তৈরি করতে হবে। যেখানে নাগরিকরা কেবল ই-কেওয়াইসি (e-KYC) সম্পন্ন করেই RBI, SEBI এবং IRDAI নিয়ন্ত্রিত সমস্ত সংস্থার মধ্যে থাকা তাঁদের সকল আর্থিক সম্পদ (সক্রিয়, নিষ্ক্রিয় বা অদাবিকৃত) দেখতে পারবেন।
২. নমিনি বাধ্যতামূলক ও উত্তরাধিকারী শনাক্তকরণ: প্রতিটি আর্থিক সম্পদের জন্য ন্যূনতম নমিনির বিবরণ বাধ্যতামূলক করা এবং মৃত মালিকের উত্তরাধিকারীদের দ্রুত শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করা।
সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র, ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক, RBI, SEBI, IRDAI-সহ মোট ৭টি সংস্থাকে নোটিশ জারি করেছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের জবাব দিতে হবে। এরপরই হবে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। আপনারও যদি কোনো পুরোনো বা নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট থাকে, তবে তৈরি থাকুন— হয়তো আপনার ‘হারানো ধন’-ও এবার ফেরত আসতে পারে!