করলা সেতু তৈরি হয়েছিল মৃতদের স্মরণে! তিস্তার তাণ্ডবে জলপাইগুড়িতে ফিরে এলো ১৯৬৮-র স্মৃতি, ভেসে গেল রাস্তাঘাট-সেতু

দুর্গাপূজা শেষ। বঙ্গজুড়ে এখন কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর প্রস্তুতি। কিন্তু উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও ডুয়ার্স এলাকায় সেই আনন্দের আবহের বদলে ফিরে এসেছে এক ভয়াবহ স্মৃতি। সেই ‘অভিশপ্ত’ তারিখ— ৪ অক্টোবর। ঠিক ৫৭ বছর আগে ১৯৬৮ সালে এই তারিখেই তিস্তার বিধ্বংসী বন্যায় সলিলসমাধি হয়েছিল শত শত মানুষের। এবারও সেই ৪ অক্টোবরেই অকালবৃষ্টিতে ফুঁসে উঠল তিস্তা-সহ অন্যান্য পাহাড়ি নদী।

নদীর জল উপচে জনপদ ভাসিয়ে দেওয়ায় জলপাইগুড়িতে ফিরে এসেছে ১৯৬৮ সালের ভয়াবহ বিভীষিকা।

‘৪ অক্টোবর’ কেন অভিশাপের দিন?
লক্ষ্মীপুজোর আগের রাত ৪ অক্টোবর তিস্তা-জলঢাকার তাণ্ডবের ঘটনা এবার প্রথম নয়। একাধিকবার এই তারিখেই উত্তরবঙ্গ ধ্বংসের মুখে পড়েছে:

১৯৬৮ সালের ৪ অক্টোবর: সেবার রেকর্ড বৃষ্টিতে সিকিম থেকে নেমে আসা তিস্তা নদীর জল হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়েছিল জলপাইগুড়িতে। মাঝরাতে রঙধামালিতে তিস্তা নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। চোখের নিমেষে ভাসিয়ে দেয় মানুষ ও প্রাণীদের। সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতে পরে নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশে তৈরি করা হয় করলা সেতু।

২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর: ঠিক একই দিনে সিকিমের বিধ্বংসী বন্যায় প্রাণ গিয়েছিল বহু মানুষের। তিস্তা নদীতে ভেসে এসেছিল একের পর এক মৃতদেহ। সেনাবাহিনীর ক্যাম্প নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল, তিস্তার জলে ভেসে এসেছিল মর্টার শেল এবং ৩২ জন জওয়ানের মৃতদেহ উদ্ধার হয় নদী থেকে।

২০২৫ সালের ৪ অক্টোবর: এবারও কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর আগের রাতে একটানা বর্ষণে ফুঁসে উঠল তিস্তা-সহ ডুয়ার্সের নদীগুলো। জলঢাকার বাঁধ ভেঙে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো একাধিক গ্রাম। জলের তোড়ে পাকা বাড়ি, রাস্তাঘাট, সেতু সব নদীর গ্রাসে চলে গিয়েছে।

৫৭ বছর আগের সেই বিভীষিকার বর্ণনা
জলপাইগুড়ি শহরের প্রবীণ নাগরিক প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৬৮ সালের সেই ভয়াবহ স্মৃতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন:

“সালটা ১৯৬৮। ৪ অক্টোবরের বন্যা সে এক বিভীষিকা। লক্ষ্মীপুজো ছিল ৪ অক্টোবর। ভোর পাঁচটায় উঠে দেখি, বাড়ির ভেতরে জল ঢুকে গিয়েছে, বিদ্যুৎ নেই। করলা নদী দিয়ে গবাদি পশু, কুকুরের মৃতদেহ ভেসে আসছে। রাতেই তিস্তা নদীর বাঁধ ভেঙে হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে। রাতের মধ্যেই হামিক পাড়া, সেন পাড়া-সহ বিভিন্ন এলাকা ডুবে যায়।”

তিনি আরও বলেন, বন্যার পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, টিনের চাল পর্যন্ত ডুবে যায়। একরাতেই জলপাইগুড়ি শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে যায়। সেই বন্যায় শহরের করলা নদীর উপর থাকা একটিও সেতু অক্ষত ছিল না, সব সেতু উড়ে যায়।

সেই ভয়াবহ ঘটনার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিও জলপাইগুড়িতে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসেছিলেন। প্রবীণ এই নাগরিকের কথায়, সেই ঘটনা কোনও দিনই ভোলার নয়।

Editor001
  • Editor001